লিয়াকত হোসেন,ফরিদপুর প্রতিনিধিঃ
ফরিদপুরে মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের নির্বাচন স্থগিত করার আদেশে শ্রমিকরা মহাসড়ক অবরোধসহ ফরিদপুর থেকে সব রুটের বাস চলাচল বন্ধ করে রেখেছে। জোরপূর্বক ৬ বছর ধরে ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে আছে, এমন নানা অভিযোগে নির্বাচন স্থগিত করেন আদালত।
বৃহস্পতিবার দুপুরে নির্বাচন স্থগিতের খবর পাওয়া যায়। দুপুর ৩টা থেকে শ্রমিকরা ফরিদপুর শহরের নতুন বাসস্ট্যান্ডের সামনে সড়ক অবরোধ করে।
সরেজমিনে দেখা যায়, নতুন বাস টার্মিনাল এলাকায় টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করছেন শ্রমিকরা। এ সময় তারা শহরের মধ্য দিয়ে চলাচলরত সব যানবাহন বন্ধ করে দেয়। এছাড়া নতুন টার্মিনাল থেকে সব বাস চলাচলও বন্ধ করে দেওয়া হয়।
বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা বলেন, আগামীকাল আমাদের নির্বাচন। এ নির্বাচন কেন বন্ধ করা হলো। যতক্ষণ পর্যন্ত আমাদের নির্বাচন না দিবে, ততক্ষণ আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব।
খবর পেয়ে সেখানে ছুটে যান পুলিশ। তারা বিক্ষুব্ধ শ্রমিকদের থামানোর চেষ্টা করেন। তবে শ্রমিকরা আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন। এ অবরোধের কারণে চরম ভোগান্তিতে পরেছেন ওই পথ দিয়ে চলাচলকারীরা। তবে শহর বাইপাস অবরোধমুক্ত থাকায় দূরপাল্লার যানবাহন চলাচলে কোনো সমস্যা হয়নি।
ফরিদপুর মোটর ওয়ার্কাস ইউনিয়নের গোলাম মো. নাসির বলেন, শুক্রবারের নির্বাচন হতেই হবে। যে কোনো মূল্যে আমরা এ নির্বাচন করতে চাই।
এ বিষয়ে কোতয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. হাসানুজ্জামান বলেন, আমরা শ্রমিকদের থামানোর চেষ্টা করেছি যাতে কোনো জানমালের ক্ষতি না হয়।
ফরিদপুরের ট্র্যাফিক পুলিশ পরিদর্শক তুহিন লস্কর বলেন, অবরোধ চলতে থাকলেও সীমিত পর্যায়ে ওই পথে গাড়ি চলছে। এ নির্বাচনের নির্বাচন কমিশনার ও শ্রমিক নেতারা রাতে জেলা প্রশাসকের সঙ্গে মতবিনিময় করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
আগামীকাল শুক্রবার ফরিদপুর মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের ত্রি-বার্ষিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। শহরের দক্ষিণ কোমরপুর মহল্লার বাসিন্দা শ্রমিক মো. মাহাবুবউদ্দিন মোল্লা ঢাকার দ্বিতীয় শ্রম আদালতে এ নির্বাচনের বিষয়ে আপত্তি জানিয়ে একটি মামলা করেন। এ পরিপ্রেক্ষিতে ওই আদালতে চেয়ারম্যান জেলা ও দায়রা জজ মো. আব্দুল হামিদ ৭ জুন অনষ্ঠিতব্য নির্বাচনের উপর নিষেধাজ্ঞা দেন। এর প্রতিবাদে শ্রমিকরা এ অবরোধ কর্মসূচি পালন করেন।
গত ৩ জুন শ্রম আদালতে বাদী হয়ে মামলা করেন মাহাবুব উদ্দিন মোল্লা। এতে ২য় পক্ষ করা হয়েছে শ্রমিক পরিচালকের দপ্তরের উপ-পরিচালসহ অন্যদের। এর মধ্যে ফরিদপুর মোটর ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সভাপতি জোবায়ের জাকির, নির্বাচন কমিশনার, নির্বাচন পরিচালনাকারী কমিটির সদস্য সচিব রয়েছেন।
বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬-এর ২১৩ ধারা দেওয়ানী কার্যবিধির ১৫১ ধারা মোতাবেক বিচারের জন্য মামলাটি করা হয়। গত বুধবার শ্রম আদালত মামলাটি গ্রহণ করে ২য় পক্ষকে আগামী ২ জুলাই জবাব দেওয়ার দিন ধার্য করেন। একইসঙ্গে ১মপক্ষ অন্তবর্তীকালীন নিষেধাজ্ঞার প্রার্থনায় উল্লেখ করেন যে, ফরিদপুর মোটর ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের ২০২৪-২০২৭ ত্রি-বার্ষিক নির্বাচনের জন্য গত ১৯ মে নির্বাচনী তপশিল ঘোষণা করা হয়েছে।
৭ জুন নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু উক্ত নির্বাচন তপশিল ঘোষণার পূর্বে ট্রেড ইউনিয়নের গঠনতন্ত্রের ২৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, ট্রেড ইউনিয়নের সদস্যদের সঙ্গে কোনো স্পেশাল মিটিংয়ের আয়োজন করা হয়নি; বর্তমান কার্যকরী কমিটি উক্ত ট্রেড ইউনিয়নের কোনো আর্থিক হিসাব প্রদান করেন না; তারা জোরপূর্বক ৬ বছর ধরে ক্ষমতা আঁকড়ে আছেন; ফরিদপুর মোটর ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সদস্য হওয়ার যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও বর্তমান সভাপতি এবং সেক্রেটারি অসৎ উদ্দেশ্যে অনৈতিক সুবিধা পেতে মোটর শ্রমিকদের বাইরে কিছু ব্যক্তিকে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে এ নির্বাচনের আয়োজন করেছে।
এসব অনিয়ম উল্লেখ করে গত ২ জুন মহাপরিচালক, শ্রম অধিদপ্তর বরাবর অভিযোগ দেওয়া হয়। শ্রম বিধিমালা-২০১৫-এর বিধি-৩৫০(১) (ঝ) মোতাবেক মহাপরিচালক, শ্রম অধিদপ্তর অভিযোগ প্রাপ্তির ৩০ (ত্রিশ) দিনের মধ্যে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন এবং অভিযোগকারীকে নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন বা ফেডারেশনের গঠনতন্ত্র ও শ্রম আইন অনুযায়ী পরবর্তী ৩০ (ত্রিশ) কার্যদিবসের মধ্যে নির্বাচন সম্পন্ন করার নির্দেশ প্রদান করবেন।
মহাপরিচালক, শ্রম অধিদপ্তর বিগত ২ জুনের উত্থাপিত অভিযোগ এখনও নিষ্পত্তি করেন নাই। সুতরাং, উক্ত অভিযোগ নিষ্পত্তি সাপেক্ষে ১মপক্ষ অত্র মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত যেন উক্ত নির্বাচন অনুষ্ঠিত না হয় সেজন্য অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞাসহ অন্তবর্তীকালীন নিষেধাজ্ঞার আদেশ প্রার্থনা করেছেন।
এমতাবস্থায় ওই নোটিশ প্রাপ্তির ১৫ (পনেরো) দিনের মধ্যে ২য়পক্ষকে এ মর্মে কারণ দর্শানোর নির্দেশ দেওয়া যাচ্ছে। অত্র মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ফরিদপুর মোটর ওয়ার্কাস ইউনিয়নের আগামী ৭ জুন তারিখের ২০২৪-২০২৭ ত্রি-বার্ষিক নির্বাচন গ্রহণ থেকে কেন তাদেরকে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার আদেশ দ্বারা বন্ধ করা হবে না।
এমতাবস্থায় ওই অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার দরখাস্ত শুনানি না হওয়া পর্যন্ত ২য়পক্ষকে ফরিদপুর মোটর ওয়াকার্স ইউনিয়নের আগামী ৭ জুনের ত্রি-বার্ষিক নির্বাচন অনুষ্ঠান না করার জন্য অন্তবর্তীকালীন নিষেধাজ্ঞার আদেশ দ্বারা নিষেধ করা হলো।
Somajer Alo24
Leave a Reply