ফরিদপুরে পাট চাষে বাড়তি খরচ মেটাতে প্রণোদনা দিয়েছিল পাট অধিদপ্তর। তবে সেই খবর কৃষক পর্যন্ত পৌঁছায়নি। অভিযোগ উঠেছে, পাট অফিসের কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিরা যোগসাজশে প্রণোদনার অর্থ ভাগ-বাটোয়ারা করে নিয়েছেন। তালিকায় থাকা ব্যক্তিদের বিষয়ে সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে অনিয়মের বিষয়টির সত্যতাও মিলেছে।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ফরিদপুরের সালথা ও নগরকান্দা উপজেলা পাট উৎপাদনে দেশসেরা। তবে পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হওয়ায় পাট জাগ দিতে অনেক কৃষককে সেচ দিতে হয়। এতে বাড়তি খরচের বিষয়টি বিবেচনায় এ বছর প্রথম পাইলট প্রকল্পের মাধ্যমে কৃষককে প্রণোদনা দিয়েছে পাট অধিদপ্তর। প্রণোদনা হিসেবে জেলার ৯ উপজেলায় ৮ জন করে কৃষককে ১১ হাজার ৮০০ টাকার চেক দেওয়া হয়। তবে সালথা ও নগরকান্দা উপজেলার সহায়তা পাওয়া ব্যক্তিদের বিষয়ে খোঁজ নিয়ে মিলেছে ব্যাপক অনিয়মের চিত্র। অসচ্ছল পাটচাষির পরিবর্তে সহায়তা পেয়েছেন ইউপি সদস্য, সরকারি কর্মচারী ও ব্যবসায়ীরা।
সালথা উপজেলার কৃষকের পরিবর্তে প্রণোদনা পেয়েছেন সোনাপুর ইউনিয়নের অফিস সহায়ক শাহাদাৎ হোসেন, রামকান্তপুর গরুর খামারি হাফিজুর রহমান, একই গ্রামের ধনাঢ্য ব্যবসায়ী জাহিদ হাসান এমেলি, সোনাপুর ইউনিয়নের ফুকরা বাজারের ব্যবসায়ী আবুল হোসেন, রামকান্তপুর ইউনিয়নের ব্যবসায়ী মোক্তার মোল্ল্যা, ইব্রাহিম হোসেন ও যদুনন্দী ইউনিয়নের আবুল হাসান। তাদের মধ্যে একজন নিজেকে কৃষক দেখাতে বাড়ির সামনে ১৫ শতক জমিতে পাট চাষ করেছেন। অথচ এই উপজেলায় কোনো কোনো কৃষক ১০ বিঘা পর্যন্ত জমিতে পাট চাষ করে থাকেন।
নগরকান্দা ইউনিয়নে তালিকায় রয়েছেন চরযশোহরদীর ইউপি সদস্য ইমারত হোসেন দুলাল, রামনগরের ইউপি সদস্য মো. হারেজ, মো. ছরোয়ার ও গিয়াসউদ্দিন, ডাঙ্গি ইউনিয়নের রাশেদ মোল্যা, ইকরাম সরদার, তালমা ইউনিয়নের মজনু ফকির ও ইকরাম ফকির। তালিকায় থাকা তিনজনকে আবার খুঁজেই পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া কেউই অসচ্ছল নন।
অনিয়মের বিষয়টি সালথা উপজেলা পাট কর্মকর্তা স্বীকার করলেও তা মানতে নারাজ নগরকান্দা পাট কর্মকর্তা। উপজেলা প্রশাসনের দায়সারা বক্তব্য, অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নগরকান্দা উপজেলার চাষি আকরাম মাতুব্বর বলেন, ‘এ বছর তিন বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছি। পাট ঘরে তুলতে বিঘাপ্রতি খরচ হয়েছে ১৭-১৮ হাজার টাকা। এক বিঘায় পাট পেয়েছি ১৪-১৫ মন। ১৫০০ টাকা মণ হিসাবে তিন থেকে সাড়ে তিন মাসের পরিশ্রমে বিঘায় লাভ হয়েছে ৪-৫ হাজার টাকা। আমার ছেলে মেয়ে না খেয়ে থাকে আর মেম্বাররা আমার হকের টাকা মেরে খায়।’
সালথার আরেক পাটচাষি মোবারক হোসেন বলেন, এই প্রণোদনার টাকা কবে দিয়েছে, কত দিয়েছে কিছুই জানি না। আমি পাইনি, কে পেয়েছে তাও জানি না। আমার এলাকার কোনো কৃষক পেয়েছে বলে শুনিনি। এ বিষয়ে নগরকান্দার রামনগর ইউপি সদস্য হারেজ প্রামাণিক বলেন, আমি একজন কৃষক। এবার তিন বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছি, তাই সরকার আমাকে প্রণোদনা দিয়েছে। প্রণোদনার অর্থ অসচ্ছল কৃষককে না দিয়ে নিজে নেওয়ার বিষয়ে বলেন, আমি কৃষক তাই নিয়েছি।
এ বিষয়ে নগরকান্দা উপসহকারী পাট কর্মকর্তা আব্দুস সালাম বলেন, ইউপি সদস্য জনগণের কাছে জনপ্রতিনিধি, আমার কাছে না। তিনি আমার কাছে কৃষক। ধনী-গরিব বিষয়ে কোনো নিয়মের কথা এখানে বলা হয়নি। বলা হয়েছে, কৃষক হতে হবে। সালথা উপজেলার উপ-সহকারী পাট কর্মকর্তা আব্দুল বারী ভুল স্বীকার করে বলেন, প্রণোদনা আসার পর তাড়াহুড়া করে দেওয়া হয়েছে। আগাম প্রস্তুতি ছিল না। কিছু ভুলত্রুটি হতে পারে। ভবিষ্যতে বিষয়গুলো খেয়াল রাখব। নগরকান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মঈনুল হোসেন অনেকটা দায়সারাভাবে বলেন, অনিয়মের বিষয়ে কেউ অভিযোগ দিলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জেলা পাট উন্নয়ন কর্মকর্তা তারেক লুৎফর আমিন বলেন, কৃষকের তালিকা করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপ-সহকারী পাট উন্নয়ন কর্মকর্তা। তাদের একটি কমিটি আছে। যে কৃষকদের পাট জাগ দিতে অতিরিক্ত খরচ হয়েছে তাদেরই বাছাই করার কথা। ভবিষ্যতে বিষয়টি খেয়ালে রাখব।
Somajer Alo24
Leave a Reply