শেখ মামুনুর রশীদ মামুনঃ
ময়মনসিংহ অনিয়ম দুর্নীতি ও ঘুষ বাণিজ্যে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর। সরকারি নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে তাদের মনগড়া চলছে লুটপাটের রাম রাজত্ব। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের নাম মাত্র সাইনবোর্ড হিসাবে ব্যবহার করে উপজেলার সমস্ত ঠিকাদারী কাজ করছেন উপ-সহকারী প্রকৌশলী রাজিব আহাম্মেদ। তাকে সহযোগিতা করছেন মেকানিক আব্দুল কুদ্দুস ও তাদের অধীনে থাকা কর্মকর্তা কর্মচারীগণ।
তাদের পিছনে থাকা প্রভাবশালী মহল ও অফিস সিন্টিকেটের কারণে অনিয়ম দুর্নীতির প্রতিবাদ করার সাহস পায়নি কেউ। সরকারি ফি জমা দেওয়ার পরও নানা অজুহাত দেখিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছে মোটা অংকের টাকা। আর এদিকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদাসীনতাকে দায়ী করছেন উপকার ভোগীরা।
উপ সহকারী প্রকৌশলী রাজিব আহাম্মেদ যোগদানের পর থেকে ওয়াশ ব্লক রানিং সহ ৫০টি, গভীর নলকূপ ১১২০ টি, পাইপ লাইন ও স্টাকচার সহ ১০ বাড়িতে পানি সরবরাহ ১৮ টি, ৪০ বাড়িতে পাইপ লাইন সহ ৩৮টি, গভীর নলকুব সহ পাবলিক টয়লেট ৪ টি, কমিউনিটি ক্লিনিকে ৮ টি, কমিউনিটি ক্লিনিক মেরামত ১০ টি, ১১২০টি নলকূপ সহ স্টাকচার, প্রাইমারি স্কুলে গভীর নলকূপ সহ হ্যান্ড ওয়াশ বেসিন ৪০টি টাইলসহ নির্মাণ করা হয়েছে। এসব নির্মাণ কাজে ব্যবহৃত হয়েছে নিম্ন মানের সামগ্রী। নামমাত্র ঠিকাদার নিয়োগ দেখিয়ে লুটে নেওয়া হচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকা।
স্থানীয় ভুবনকুড়া ইউপি সদস্য ইউনুস আলী জানান, এক বছর আগে সরকারী ফি জমা দেন তিনি। এর পর থেকে বোরিং এর নামে বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে প্রায় পঞ্চাশ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয় জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলের লোকজন। টাকা ও নলকূপ-ওয়াশ ব্লক স্থাপনে জনস্বাস্থ্য
তিন বেলা খাবার না দিলে, বোরিং সুবিধা হবে না, কিছুদিন পর টিউবওয়েলে পানি থাকবে না, মিস্ত্রিরা ঠিকমতো কাজ করবে না, এসব নানা অজুহাত দেখাতে
থাকে অফিসের লোকজন।
নিরুপায় হয়ে তাদের কথা মতো সকল প্রস্তাব বাধ্য হয়ে মেনে নিতে হয়েছে। একদিকে মিস্ত্রি কর্তৃক অত্যাচার অন্যদিকে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরে দায়িত্বে থাকা লোকজনদের রুক্ষ আচরণে অতিষ্ঠ আমিসহ আমার পরিবারের লোকজন। এতকিছুর পরেও এখন পর্যন্ত সরকারি নলকুপ থেকে বঞ্চিত এই জনপ্রতিনিধি।
একই ইউনিয়নের ইউপি সদস্য আক্কাস আলী বলেন, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান বর্তমান সংসদ সদস্য মাহমুদুল হক সায়েম তিনি অত্র ইউনিয়নে ২০২২-২৩ অর্থবছরে পাঁচটি গভীর নলকূপ দিয়ে ছিলেন।
এখন পর্যন্ত একটি নলকূপের কাজও সম্পন্ন হয়নি। তিনি একাধিকবার জনস্বাস্থ্য অফিসে গিয়ে যোগাযোগ করলেও কোন সমাধানের আশ্বাস খুঁজে পাইনি। একপর্যায়ে মন্তব্য করে বলেন এটি জনসাস্থ্য অফিস নয় এটি ভোগান্তি অফিসের নামকরণ করা হলে আরো ভালো হতো।
উপজেলার স্বদেশী গ্রামের তোফাজ্জল হোসেন জানান, সরকারী নলকূপ নিতে গিয়ে নানা লাঞ্ছনা বঞ্চনার শিকার
হয়েছেন তিনি। বোরিং এর সময় ১০-১২ জন লোক টানা ১৫ দিন তিনবেলা খাওয়াতে হয়েছে তার। বোরিং করার মেশিনের তেল খরচ থেকে শুরু করে তাদের প্রত্যেকের পকেট খরচও দিতে হয়েছে । এ নিয়ে অতিরিক্ত প্রায় ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা খরচ করেও এখন পর্যন্ত নলকূপের স্ট্রাকচার ও পানির ট্যাংক পাননি তিনি। অফিসে একাধিকবার যোগাযোগ করেও কোন
সুরাহা মেলেনি বলে জানান তোফাজ্জল হোসেন।
এ বিষয়ে ক্যামেরার সামনে কথা বলতে রাজি হয়নি হালুয়াঘাট জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপ-সহকারী প্রকৌশলী রাজিব আহাম্মেদ।
তবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আবিদুর রহমান বলেন, কিছু কিছু অভিযোগ আমি পেয়েছি, সরজমিনে তদন্ত সাপেক্ষে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের মাধ্যমে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ ব্যাপারে জনস্বাস্থ্যের জেলা নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ জামাল হোসেন বলেন, অভিযোগের সত্যতা প্রমানিত হলে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
Somajer Alo24
Leave a Reply