লিয়াকত হোসেন, ফরিদপুর:
ফরিদপুরের ভাঙ্গায় ফসলী জমিতে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলন করছিলেন বালু খেকোরা।
অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় প্রভাবশালী একটি চক্রের ছত্রছায়ায় দীর্ঘদিন ধরে বালু উত্তোলন করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বালুদস্যুরা।
এরপর স্থানীয় সংবাদকর্মীদের মাধ্যমে খবর পেয়ে সেই বালু উত্তোলন বন্ধ করলেন ভাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) বিএম কুদরত এ খুদা।
শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) দুপুরে উপজেলা তুজারপুর ইউনিয়নের চাড়ালদিয়া গ্রাম থেকে একটি অবৈধ ড্রেজার জব্দ করেন উপজেলা প্রশাসন।
এসময় প্রশাসনের উপস্থিতি টের পেয়ে পালিয়ে যায় বালু খেকো আওয়ামী লীগ নেতা মনির কাজী গংরা।
স্থানীয়রা জানায়, স্থানীয় একটি প্রভাবশালী চক্রের ছত্রছায়ায় বালুদস্যু খ্যাত মনির কাজী নামের এক ব্যক্তি দীর্ঘদিন যাবত ওই এলাকায় ফসলী জমিতে ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলন করছিলেন। এতে পাকা সড়ক, জমি ও বসতঘর গুলি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার শঙ্কায় স্থানীয়রা একাধিকবার বালু উত্তোলন বন্ধের জন্য বালু ব্যবসায়ীদের অনুরোধ করলেও উল্টো হয়রানির হন স্থানীয়রা।
অভিযোগ রয়েছে, বালু ব্যবসায়ী মনির কাজী স্থানীয় প্রশাসন ও ফরিদপুর-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মুজিবুর রহমান (নিক্সন) চৌধুরী লালিত পালিত কতিপয় অসাধু সাংবাদিক ও স্থানীয় রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের নাম ভাঙ্গিয়ে অবাধে বালু উত্তোলন করে আসছিলেন।
এ কাজে মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে প্রভাবশালী চক্রটি স্থানীয় প্রশাসন, সাংবাদিকদের ম্যানেজ করার কথা বলে হাতিয়ে নিচ্ছেন লাখ লাখ টাকা।
স্বপন মাতুব্বরের স্ত্রী জানান, তার জমিতে বালু ভরাটের জন্য ১ লাখ টাকা নিয়েছেন মনির কাজী।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরও কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা জানান, গত সপ্তাহে ২ লাখ ৮০ হাজার টাকার বিনিময়ে তার একটি জমিতে বালু ভরাটের জন্য চুক্তি হয় মনির কাজীর সঙ্গে। সেই কাজটি ইতোমধ্যে সম্পন্ন হওয়ার পর তাকে টাকা পরিশোধ করা হয়েছে।
স্থানীয় স্কুল শিক্ষার্থী সজিব (১০) জানায়, চাড়ালদিয়া মসজিদ সংলগ্ন সড়কের পাশেই সদ্য বালু ভরাট করেছেন স্থানীয় আইয়ুব মাতুব্বর নামের এক ব্যক্তি। যা গত এক মাস আগেই জমিতে ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলন করা হয়।
এদিকেসরেজমিনে ঘটনাস্থানের ড্রেজার শ্রমিক গোপালগঞ্জের বাসিন্দা কৃষ্ণ কুমার জানায়, তিনিসহ প্রায় ৫ জন শ্রমিক প্রতিদিনের জন্য ৮শ টাকায় হাজিরা নিয়ে কাজ করছেন। গত এক সপ্তাহ যাবত চাড়ালদিয়া গ্রামে ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলন করছেন তারা। ড্রেজারটি ভাঙ্গা চৌধুরীকান্দা গ্রামের বাসিন্দা মনির কাজীর তত্বাবধানে চলছে। এ পর্যন্ত কয়েক লাখ টাকার বালি উত্তোলন করা হয়েছে। সামনে আরও কিছু বেডে বালু ফেলা হবে।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধি মো: হাবিব মাতুব্বর জানান, বালু উত্তোলন বন্ধের জন্য বলা হলে উল্টো স্থানীয় গ্রাম্য দলাদলির ঝামেলার সৃষ্টি হয়। তাই এসব দেখেও না দেখার মতো করে চলেন তিনি।
এ বিষয়ে বালু ব্যবসায়ী মনির কাজীর মোবাইলে একাধিকবার যোগাযোগ করেও তাঁর বক্তব্য পাওয়া যায় নি।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিএম কুদরত এ খুদা জানান, খবর পেয়ে আজ দুপুরে চাড়ালদিয়া গ্রাম থেকে একটি ড্রেজার জব্দ করা হয়েছে। এসব ড্রেজার বন্ধে ও বালু ব্যবসায়ীদের আইনের আওতায় আনার জন্য খুব শীঘ্রই মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে।
তিনি আরও জানান, অসাধু বালু ব্যবসায়ী দের সঙ্গে প্রশাসনের কোন যোগসাজশ নেই। কারও বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কোন অভিযোগ পাওয়া গেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
Somajer Alo24
Leave a Reply