মুন্সীগঞ্জের টঙ্গিবাড়ী উপজেলার পাঁচগাঁও ভূমি অফিস ঘেরাও করেছে স্থানীয়রা।নামজারিসহ সব ধরনের ভূমি ফি বেশি নেওয়ার প্রতিবাদে গতকাল বুধবার দুপুর ১২টার দিকে ওই অফিস ঘেরাও করে শতাধিক ভুক্তভোগী।
ঘেরাওকালে ভূমি অফিসে এক ভূমি দালালকে দেখে ওই দালাল এবং ভূমি কর্মকর্তার ওপর চড়াও হয় স্থানীয়রা। এ অবস্থায় সেখানে উত্তপ্ত পরিস্থিতি তৈরি হলে ভূমি কর্মকর্তা ও অভিযুক্ত দালাল অফিস থেকে বেরিয়ে চলে যান।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, পাঁচগাঁও ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা মাহমুদ আলম ও অফিস সহকারী লিজা আক্তার দীর্ঘদিন ধরে ভূমি অফিসে নামজারি বাণিজ্যসহ বিভিন্ন অপকর্ম করে আসছেন। যে কোনো নামজারি করতে গেলে তারা ১০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত দাবি করেন। কাঙ্ক্ষিত টাকা না পেলে নামজারি করেন না। অফিস সহকারী লিজা ১১ বছর ধরে এই ভূমি অফিসে কর্মরত। তিনি দলিলের নকল উঠানো থেকে শুরু করে ভূমি অফিসে বসে সব ধরনের ভূমি বাণিজ্য করে থাকেন। বিনিময়ে গ্রাহকদের কাছ থেকে হাতিয়ে নেন হাজার হাজার টাকা। অফিসে নতুন কোনো তহশিলদার এলেই লিজা তাঁকে নিয়ে ভূমি বাণিজ্যে নামেন। ভুক্তভোগীদের দাবি, মূলত লিজার কারণেই এ এলাকার লোকজন দীর্ঘদিন ধরে হেনস্তার শিকার হচ্ছেন।
ভুক্তভোগী খোকন মোল্লা বলেন, তাঁর সাড়ে ৩ শতাংশ জমির নামজারি করতে লিজার সঙ্গে ৩০ হাজার টাকা চুক্তি হয়েছিল। পরে লিজা ৫০ হাজার টাকা দাবি করেন। কম হলে নামজারি করে দেবেন না বলে জানান। পরে ৫০ হাজার টাকা দিয়েই নামজারি নিতে বাধ্য হন তিনি।
মসু হালদার বলেন, ‘আমার দুইটা নামজারি কইরা দেওয়ার কথা বলে ২০ হাজার টাকা নিছে। একটা নামজারি কইরা দিছে আরেকটা না দিয়া ৮ মাস ধইরা ঘুরাইতাছে।’
নবী নূর বেপারি (৮০) বলেন, ‘আমি নামজারি করতে ভূমি অফিসে গেছি। আমার কাছে ২০ হাজার টাকা চাইছেন লিজা। আমার কাছে টাকা নাই; তাই জমি নামজারি করতে পারতেছি না।’
আলমগীর মাদবর বলেন, তারা ভূমি অফিসে কাজকর্ম করতে এলে তাদের হয়রানি করা হয়। প্রচুর টাকা চায়। তারা গরিব। এত টাকা কোথায় পাবেন। তিনি সাড়ে ৮ শতাংশ জমি নামজারি করতে গেলে তাঁর কাছে লিজা ১৫ হাজার টাকা চান। যার সম্পত্তি যত বেশি, তাঁর কাছ থেকে তত বেশি টাকা চান।
মিজান মোল্লা বলেন, তাঁর বাড়ি নামজারি করতে দেড় লাখ টাকা নিয়েছেন। একটা জমি নামজারি করতে ৩৩ হাজার টাকা নিয়েছেন লিজা। কাজ করতে গেলেই তারা বলেন এসিল্যান্ড অফিসে, ভূমি অফিসে টাকা দিতে হয়। এসব ছাড়াও বিভিন্ন অজুহাতে টাকা দাবি করেন। পর্চা আনতে গেলে ৩ হাজার টাকা দিতে হয়। তিনি বলেন, ’১০-১১ বছর ধইরা এই অফিসের পিয়ন লিজা। সে এ এলাকার মানুষের সম্পর্কে সব জানে। মানুষ গেলেই তহশিলদারকে বলে, স্যার ওর টাকা আছে, ২০-৩০ হাজারের নিচে কলম ধইরেন না।’
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত লিজা আক্তার তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তারা কারও কাছ থেকেই বেশি টাকা নেন না। কিন্তু সবাই তো আপনার সামনেই বলছেন আপনি বেশি টাকা নেন, কেন বলছেন– এমন প্রশ্নের কোনো সদুত্তর তিনি দিতে পারেননি।
পাঁচগাঁও ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা মু. মাহমুদ আলমের ভাষ্য– তিনি কারও কাছ থেকে নামজারির জন্য বেশি টাকা নেননি। তাঁর অফিসে বসে লিজা যে এ ধরনের কাজকর্ম করেন, কেউ তা আগে তাঁকে জানায়নি বলে দাবি করেন তিনি।
টঙ্গিবাড়ীর ইউএনও আসলাম হোসাইন বলেন, বিষয়টি তাঁর জানা ছিল না। এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে অবশ্যই ব্যবস্থা নেবেন বলে জানান তিনি।
Somajer Alo24
Leave a Reply