লিয়াকত হোসেন,ফরিদপুর:
ফরিদপুরের ভাঙ্গায় স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতা ও সাবেক ভাঙ্গা পৌর কাউন্সিলর শেখ সৈয়দ আলীর কাছে ১ লাখ টাকা ঘুষ চাওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে কর পরিদর্শক মোঃ মজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে।
পরিদর্শকের অফিসে টাকা নিয়ে সময়মত হাজির না হওয়ায় ওই ব্যক্তির সঙ্গে খারাপ আচরণও করেন তিনি। সৈয়দ আলী মৌখিকভাবে ও এক ভিডিও বক্তব্যে এমন অভিযোগ করেন সাংবাদিকদের কাছে।
সৈয়দ আলী ভাঙ্গা পৌর সভার ৬ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ওই ওয়ার্ডের সাবেক দুইবার নির্বাচিত কাউন্সিলর। তবে ফরিদুপরের কর পরিদর্শক মজিবুর রহমান ঘুষ চাওয়ার অভিযোগটি অসত্য বলে দাবি করেন।
শেখ সৈয়দ আলীর অভিযোগ, রমজান মাস শুরুর তিনদিন আগে তার বাড়িতে যান কর পরিদর্শক মজিবুর রহমান।
এসময় মজিবুর তার ভিজিটিং কার্ড ও পরিচয় দিয়ে সৈয়দ আলীর স্ত্রীকে জানান, তিনি ফরিদপুর আয়কর অফিস থেকে আসছেন এবং ৫ তলা বিল্ডিংটি তাদের মাপতে হবে। পরে ছাদে গিয়ে পুরো বিল্ডিংটি মাপামাপি করেন মজিবুর।
এক পর্যায়ে, মজিবুর বলেন আমরা বাড়িটি তৈরীর ব্যাপারে সমস্ত খোঁজ খবর নিতে আসছি, আপনার স্বামীকে বাড়িতে আসতে বলেন।
পরবর্তিতে সৈয়দ আলী বাড়িতে আসলে তাকে তার ৫ তলা বাড়িটি নির্মাণের ব্যাপারে আয়-ব্যায়ের হিসাব নিকাশসহ বিভিন্ন জিজ্ঞাসাবাদ করেন মজিবুর।
সৈয়দ আলী তাকে জানান, তার বাড়িটির ব্যাংকের লোন এখনো পরিশোধ হয় নি। প্রতিমাসে বাড়ির ভাড়া তুলে ব্যাংকের কিস্তির টাকা পরিশোধ করেন। এমনকি কোন মাসে সেই কিস্তির টাকা পুরোপুরি জোগাড়ও হয় না তার। বাড়িটি নির্মানের ব্যায় হিসেবে ৮৫ থেকে ৯০ লাখ খরচ হয়েছে বলে মজিবুরকে জানান। সেই টাকার তিনি ভাঙ্গা ইসলামী ব্যাংক থেকে লোনের মাধ্যমে ৪০ লাখ ও তার আরও একটি দুই তলা বাড়ি বিক্রি বাবদ ৩৭ লাখ এবং ভাঙ্গা পৌরসভার ফাইভ ষ্টার মার্কেটের একটি দোকান বিক্রি বাবদ আরও ২০ লাখসহ মোট ৯৭ লাখ টাকা জোগাড় করে ওই ৫ম তলা বিল্ডিংটি নিমার্ণ কাজ সম্পূর্ণ করেন।
কিন্তু কর পরিদর্শক মজিবুর এসব তথ্য বানোয়াট ও মিথ্যা বলে সৈয়দ আলীকে দুদকের মামলার ভয় দেখান এবং তাকে বলেন, আপনি ১ কোটি টাকার বেশী খরচ করে বাড়িটি নির্মান করেছেন। এতে সরকারের রাজস্ব আয়কর ও ভ্যাট হিসেবে প্রায় ৩০ লাখ টাকা আপনাকে দিতে হবে। এতে রাজি না হয়ে সৈয়দ আলী মজিবুরকে জানায়- আপনি আইনগত ভাবে যা হয় তাই করেন।
পরবর্তিতে মজিবুর সৈয়দ আলীর বাড়িটির ভ্যাট ও কর পরিশোধের ঝামেলা মেটাতে ‘খরচাপাতি’ বাবদ তাকে ১ লাখ টাকা দিতে বলেন এবং পরবর্তী তিন দিনের মধ্যে ফরিদপুর আয়কর অফিসে যেতে বলেন। তা না হলে সৈয়দ আলীর বিরুদ্ধে দুদকের মামলা করার ভয় দেখায় কর পরিদর্শক মজিবুর।
সৈয়দ আলী জানান, এরপর সময়মত ফরিদপুর আয়কর অফিসের কর পরিদর্শকের চেম্বারে যাই। সেখানে গিয়ে বাড়িটির ভ্যাট ও কর পরিশোধ সংক্রান্ত বিষয়ে সৈয়দ আলীর পক্ষের জনৈক উকিলের সঙ্গে মজিবরকে কথা বলতে অনুরোধ করা হয়।
এতে হঠাৎ মজিবুর ক্ষিপ্ত হন এবং তাকে ১ লাখ টাকা আজকে দিতেই হবে, তা না হলে তার বিরুদ্ধে দুদকের মামলায় তাকে জড়ানোর হুমকি দেন মজিবুর।
এসময় টাকা দিতে অপারগতা জানিয়ে শারিরীক ভাবে মারাত্বক অসুস্থতায় দিন কাটাচ্ছেন বলে তাকে জানান সৈয়দ আলী। এরপরও তাঁর ভাঙ্গায় যাওয়া আসার ‘খরচাপাতি’ হিসেবে মজিবর ৫ হাজার টাকা চেয়ে নেন সৈয়দ আলীর কাছ থেকে।
পরবর্তীতে গত কয়েকদিন যাবত মজিবর তাঁর মোবাইলে একাধিকবার ফোন করতে থাকেন এবং ওই ১ লাখ টাকা নিয়ে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে বলছেন।
এ ঘটনায় মানসিকভাবে অস্বস্তিতে ভুগছেন সৈয়দ আলী ও তার পরিবারের সদস্যরা।
সৈয়দ আলীর বড় ছেলে শেখ বাহাউদ্দিন জানান, তাঁর বাবা দীর্ঘদিন যাবত শারীরিক ও মানুষিক অসুস্থতায় ভুগছেন। অথচ, কর পরিদর্শক মজিবুর রহমান অন্যায়ভাবে তাঁর বাবার কাছে ১ লাখ টাকা দাবি করছেন। টাকা নিয়ে তাঁর অফিসে হাজির না হওয়ায় তার বাবার সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেছেন কর পরিদর্শক মজিবুর।
এতে তার অসুস্থ বাবা ও তার পরিবারকে শারিরীক ও মানুষিকভাবে হেয় করা হয়েছে। এ ঘটনার একটি সুষ্ঠু বিচারের দাবি করেছেন তিনি।
ফরিদপুরের কর পরিদর্শক মো. মজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে জানতে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আপনি উল্টা-পাল্টা কথা বলছেন। আমি কারও কাছে কোন টাকা চাইনি। এগুলো সত্য কথা নয়।’ এই বলেই তিনি তাঁর মোবাইল সংযোগটি কেটে দেন। এরপর পুনরায় তার সঙ্গে একাধিকবার এ বিষয়ে কথা বলার জন্য মোবাইলে কল করলে তিনি কলটি কেটে দেন।
ফরিদপুরের পারিসা অটো ব্রিক্সের পরিচালক মোশাররফ হোসেনসহ কয়েকজন ব্যবসায়ীরা জানান, কর পরিদর্শক মজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে চরম অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে।
যদি সংশ্লিষ্টরা অনুসন্ধান চালায় তাহলে থলের বেড়াল বের হয়ে আসবে। তারা দাবী করেন, ফরিদপুরে আয়কর দপ্তরের প্রতি সাধারণ মানুষের ভয় মজিবুরের মত অসাধু লোকজনদের জন্য। এরা অবসরে যাওয়ার আগে যদি সাধারণ মানুষের কাছে অন্যায়ভাবে এ ভাবে টাকা দাবি করেন, তাহলে নতুন যারা ব্যবসায়ী আছেন, যারা কর দিতে চান, তারা অনাগ্রহী হবেন। এতে সরকারের রাজস্ব আয় ক্ষতির সম্মুখিন হবে।
তাই, শুধু মজিবুর নয় এরকম অসাধু ব্যাক্তি যারা সরকারের চেয়ারে কলম নিয়ে ডাকাতি করছেন তাদেরকে চিহ্নিত করতে হবে এবং তাদেরকে বিচারের আওতায় আনতে হবে।
Somajer Alo24
Leave a Reply