নিজস্ব প্রতিবেদক
ময়মনসিংহের ফুলবাড়ীয়ায় কাগজে কলমে ৮টি প্রকল্প দেখিয়ে ৭৫ লাখ টাকা উত্তোলন ও লোপাট করা হয়েছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এডিপি’র আওতায় কাগজে কলমে প্রকল্প দেখিয়ে ৭৫ লাখ টাকা আত্মসাৎ এর অভিযোগ উঠে উপজেলা ইঞ্জিনিয়ার মনিরুজ্জামান ও প্রকল্প সভাপতি উপজেলা নির্বাহী অফিসার কাবেরী জালালের বিরুদ্বে।
অনুসন্ধানে জানাযায়, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আওতায় ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ফুলবাড়ীয়া উপজেলায় ৮টি প্রকল্প নেয়া হয়। প্রকল্পের মোট বরাদ্দ ছিল ৭৫ লাখ টাকা। উপজেলায় ৮টি প্রকল্প দরপত্রের মাধ্যমে বাস্তবায়নের কথা থাকলেও কাগজে কলমে প্রকল্প দেখিয়ে কোটি টাকা লোপাট করা হয়।
সরেজমিনে গেলে দেখাযায়, কোনো প্রকল্পের কাজই হয়নি। প্রকল্পের কাজ হয়েছে কিনা তা দায়িত্বশীল থেকে স্থানীয়রাও জানেননা। অদৃশ্য সেসব প্রকল্প গুলো কাগজে কলমে সদৃশ্য দেখিয়ে সব ক’টি প্রকল্পের টাকা তুলে নেয়া হয়েছে। ফুলবাড়ীয়া উপজেলা পরিষদের এডিপি’র বরাদ্দের এসব প্রকল্প বাস্তবায়িত হওয়ার কথা ছিল স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) মাধ্যমে।
প্রকল্পগুলোর মধ্যে ছিল, ইচাইল উচ্চ বিদ্যালয়ের সংস্কারের জন্য ১০ লাখ টাকা, আন্ধারিয়াপাড়া বিডিএস দাখিল মাদ্রাসা ১০ লাখ টাকা, কাচিচূড়া উচ্চ বিদ্যালয় ১০ লাখ টাকা, সলেমন নেছা এতিমখানা ও দাখিল মাদ্রাসা ১০ লাখ টাকা, অন্বেষণ উচ্চ বিদ্যালয় ১০ লাখ টাকা, উপজেলা পরিষদের রাস্তা (ঐই)করণ ১০ লাখ টাকা, উপজেলা শিল্পকলা একাডেমির জন্য ১০ লাখ টাকা, উপজেলা চেয়ারম্যানের কোয়ার্টার মেরামত ৫ লাখ টাকা। ৮টি প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়নে তিনটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেওয়া হয়। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তিনটি হলো প্রসাদ এন্টারপ্রাইজ, অর্ণব এন্টারপ্রাইজ, উড়ালাল এন্টারপ্রাইজ। ২৫শে জুন টাকা উত্তোলন করেন উপজেলা ইঞ্জিনিয়ার মনিরুজ্জামান। ৮টি প্রকল্পের কাজ তিনটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে কাগজে কলমে দেখিয়ে টাকা উত্তোলন করে ভাগ-বাটোয়ারা করেন।
সম্প্রতি ৮টি প্রকল্প এলাকায় সরজমিন গিয়ে দেখা যায়, কোনো প্রকল্পে কাজই হয়নি। অথচ কাগজে-কলমে সব ক’টি প্রকল্পই বাস্তবায়িত দেখানো হয়েছে। অন্বেষণ উচ্চ বিদ্যালয়ের সংস্কারের জন্য যে কাজ করার কথা ছিল, তার অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক নিজাম উদ্দিন খান বলেন, আমি বরাদ্দের বিষয়ে জানতাম না, গত কয়েকদিন আগে শুনেছি, আমাকে ইঞ্জিনিয়ার অফিস বলেছে পানির সাপ্ল্লাই লাইন করে দিবে আমি না করে দিয়েছি। উপস্থিত অভিভাবকগণ বলেন, সরকারি টাকা এভাবেই কাজ না করে আরও অনেক টাকা খেয়েছেন। ইচাইল উচ্চ বিদ্যালয়ে গিয়ে সংস্কারের নামে কাজ কিছুই হয়নি।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোসা. নজিবা আক্তার বলেন, আমি এ বিষয়ে কিছু জানতাম না, গত সোমবার ৮ই ডিসেম্বর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের অফিস সহকারী আনোয়ার ভাই ফোনে আসতে বলেন, গিয়ে দেখি উপজেলা ইঞ্জিনিয়ার বসে আছেন। তিনি পাঁচ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকগণকে বলেন, ‘আপনাদের জন্য সরকার থেকে কিছু বরাদ্দ আছে। আমাকে চেয়ার, টেবিল, একটি ল্যাপটপ দেবেন। আমি বুঝতেছি না হঠাৎ করে এসব দিবে, আমি কিছু বলিনি। তখন আমি বলি, আমার নামে ১০ লাখ টাকার প্রকল্প আছে, টাকা উঠিয়ে ফেলেছেন কীভাবে? আমাকে কাজ বুঝিয়ে দিলেন না, কাজের বিলে সই-স্বাক্ষর নিলেন না। তাহলে কীভাবে হলো অবশ্যই আমার সই স্বাক্ষর জাল করে এসব করেছেন।
সলেমন নেছা এতিমখানা ও দাখিল মাদ্রাসা জরাজীর্ণ অবস্থায় আছে উন্নয়ন প্রকল্পের নামে ১০ লাখ টাকা তুলে নেয়া হয়েছে। সেখানেও কোনো উন্নয়ন কাজ হয়নি। কলেজ শিক্ষক নাজমুল হক বলেন, যাদের মন-মানসিকতা নোংরা তারাই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এতিমদের টাকা আত্মসাৎ করতে পারে এবং তারাই পদোন্নতি পায়।
উপজেলা প্রকৌশলী মনিরুজ্জামান বলেন, কোনো কাজ হয়নি ঠিক, তবে টাকা লোপাটে কোনো ঘটনা ঘটেনি। টাকা ফেরত দিয়ে দেবো। ৭৫ লাখ টাকার মাঝে ২৫ লাখ টাকার হিসাব ইউওনো ম্যাডাম জানেন।
ফুলবাড়ীয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কাবেরী জালালের সম্পৃক্ততা থাকায় সে সদউত্তর দিতে পারেনি।
Shohidul Islam
SOMAJER ALO24