রাজধানীর মোহাম্মদপুরে হঠাৎ করেই বেড়েছে ছিনতাই ও ডাকাতির ঘটনা। এনিয়ে বেসরকারী একটি টেলিভিশনে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। ভিডিওতে দেখা যায় একটি সুপারশপে মুখোশ পরা ডাকাতেরা চাপাতি দেখিয়ে কর্মচারীদের জিম্মি করে টাকা লুটে নিচ্ছে। শুক্রবার রাতে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বছিলার গার্ডেন সিটি এলাকায় ওই ঘটনা ঘটে। ২০ অক্টোবর সকালে মোহাম্মদপুর হাউজিং লিমিটেড এলাকায় দুটি মোটরসাইকেলে ছয়জন ছিনতাইকারী অস্ত্রের মুখে নেসলে কোম্পানির গাড়ি আটকে ১১ লাখ ৮৫ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয়।
রাজধানীর মোহাম্মদপুরে হঠাৎ খুনখারাবি, ছিনতাই ও ডাকাতি বেড়ে গেছে। এমন পরিস্থিতিতে সন্ত্রাসমুক্ত মোহাম্মদপুরের দাবিতে এলাকাবাসী শনিবার বিকেলে মোহাম্মদপুর থানার সামনে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করেছে। প্রতিবাদ কর্মসূচি থেকে এমন অবস্থার জন্য তাঁরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে দায়ী করেছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির দৃশ্যমান অগ্রগতির জন্য তাঁরা পুলিশ প্রশাসনকে তিন দিনের সময় বেঁধে দিয়েছেন প্রতিবাদকারীরা।
ভুক্তভোগীরা জানান, গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর রাজধানীতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়ায় যানবাহন ও জনবল সংকটে পুলিশের টহল কার্যক্রম পুরোদমে শুরু হয়নি। এই সুযোগে অপরাধী চক্র মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। মোহাম্মদপুরের কিছু কিছু এলাকায় গড়ে উঠেছে নতুন সন্ত্রাসী গ্রুপ। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চাকরিচ্যুত সদস্যদের কেউ কেউ ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের সাথেও যুক্ত হয়েছেন।
আরো পড়ুন- সুনামগঞ্জে আসামি ছিনতাই, ১৫০ জনের বিরুদ্ধে মামলা
বিভিন্ন সূত্র জানায়, মোহাম্মদপুরে প্রায় প্রতিদিনই ছিনতাই-ডাকাতির ঘটনা ঘটছে, যার বেশির ভাগই গণমাধ্যমে আসে না। ছিনতাইকারীর আঘাতে আহত হয়ে হাসপাতালে গেলে কিংবা থানায় মামলা হলে তা কেবল গণমাধ্যমে আসে। অনেকেই হয়রানির ভয়ে থানা-পুলিশ পর্যন্ত যেতে চান না। থানায় ছিনতাইয়ের যে পরিসংখ্যান লিপিবদ্ধ করা হয় তা প্রকৃত ঘটনার চেয়ে অনেক কম।
ডাকাতির ঘটনায় র্যাবের সাবেক একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাও জড়িত বলে তথ্য পেয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, লেফটেন্যান্ট কর্নেল পদমর্যাদার ওই কর্মকর্তা র্যাব সদর দপ্তরের একটি শাখার প্রধান ছিলেন।
এ ছাড়াও ডাকাতির ঘটনায় র্যাব ৪ এ কর্মরত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কয়েকজন সদস্যের (ননকমিশন্ড) নাম এসেছে। তাঁদের বিষয়ে র্যাব ও সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকেও ঘটনাটি তদন্ত করা হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানিয়েছে। এই ডাকাতির ঘটনায় আটজনকে গ্রেপ্তারের কথা জানিয়েছে র্যাব। মামলার তদন্ত সংস্থা ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি) তিনজনকে গ্রেপ্তারের কথা জানিয়েছেন।
আরো পড়ুন- সুনামগঞ্জে আসামি ছিনতাই, ১৫০ জনের বিরুদ্ধে মামলা
মোহাম্মদপুর থানার ওসি আলী ইফতেখার হাসান বলেন, নানা কারণে মোহাম্মদপুর আগে থেকেই রাজধানীর অপরাধপ্রবণ এলাকাগুলোর একটি। ১০ শীর্ষ সন্ত্রাসীর বৃত্তান্ত খোঁজ করলে দেখা যায়, এর মধ্যে ছয়জনের জন্ম মোহাম্মদপুরে। জনবল সংকটের কারণে পুলিশ সেখানে ঠিকমতো টহল দিতে পারছে না।
প্রতিবাদ কর্মসূচি শেষে স্থানীয় জনতা মোহাম্মদপুর থানার ওসি আলী ইফতেখার হাসানের কক্ষে বৈঠক করেন। সেখানে তাঁরা পুলিশের তেজগাঁও অঞ্চলের অতিরিক্ত উপকমিশনার জিয়াউল হকের সঙ্গে কথা বলেন। স্থানীয় লোকদের বক্তব্য শুনে জিয়াউল হক বলেন, ৫ আগস্টের পর পুলিশের জনবল ও রসদসামগ্রীর ঘাটতি দেখা দিয়েছে। তা ছাড়া মোহাম্মদপুরে যেসব পুলিশ সদস্য আছেন, তাঁদের অধিকাংশই নতুন। এমন পরিস্থিতিতে তাঁরা স্থানীয় জনতার সহায়তা চান।
Shohidul Islam
SOMAJER ALO24