নিজস্ব প্রতিবেদক:
নেই পদ-পদবি, ছিলেন না কোনো কর্মসূচিতে। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের সঙ্গে সঙ্গে তারাই এখন বিএনপির নেতাকর্মী সেজেছে। দাপট দেখিয়ে নিজ নিজ এলাকায় দখলবাজী, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
সূত্র বলছে, হাইব্রিডদের দাপটে চুপসে গেছে ত্যাগী নেতারা। গত কয়েক দিনে জমি ও বাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দখল ভাঙচুর করেছেন। এই চক্র এখন চাঁদাবাজি ও দখলের উৎসবে মেতেছে। এ পরিস্থিতি ঠেকাতে হার্ডলাইনে বিএনপি। পাড়া-মহল্লায় প্রতিরোধ কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রতিটি এলাকায় মাইকিং শুরু করা হয়েছে দুর্বৃত্ত মোকাবিলায়। শুধু হাইব্রিড নেতাকর্মী নয়, দলের কোনো নেতাকর্মীও অপকর্মে সম্পৃক্ত হলে তাৎক্ষণিক দলীয় পদ থেকে বহিষ্কার করার নির্দেশ দেওয়া হয়। ইতোমধ্যে বহিস্কারের হিড়িক পড়েছে।
মুক্তাগাছার দাওগাঁও ইউনিয়নে সাবেক মেম্বার নজরুল ইসলাম ও তার ভাই তারিকুল ইসলামের নেতৃত্বে ইউনিয়ন জুড়ে ব্যাপক হামলা ভাঙচুর ও দখলবাজির অভিযোগ উঠেছে। গত ৬ আগষ্ট সাবেক মেম্বার ও সাবেক বিএনপি নেতা নজরুল ইসলাম (বর্তমানে জাতীয় পার্টি নেতা) তার বাহিনীর ভাঙচুর অগ্নিসংযোগ এর ভয়াবহতায় ইউনিয়নের সাধারণ মানুষের মাঝে আতংক বিরাজ করছে। নজরুলের নেতৃত্ব প্রায় শতাধিক বিএনপির কর্মী সমর্থকরা হামলা চালিয়ে দাওগাঁও ইউনিয়নে প্রায় ২০ টি বাড়িতে ব্যাপক ভাঙচুর অগ্নিসংযোগ করা হয়। এসময় ব্যাপক তান্ডব চালানো হয়েছে চরপাড়া এলাকার মৃত আব্দুল মজিদের পুত্র শফিকুল ইসলামের বাড়িতে। আসবাবপত্র বাড়ি ভাঙচুরের ঘটনায় নগদ ৪লক্ষ টাকা লুটসহ প্রায় অর্ধকোটির অধিক টাকা ক্ষতিসাধন করে। সামানিয়া মোড়ে তার ফার্নিচারের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানেও ব্যাপক ক্ষতি সাধন করে। এছাড়াও সাবেক মেম্বার জালাল উদ্দীনের নেতৃত্বে এক দিনমজুরের গরু ধরে এনে জবাই করে খাওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
এছাড়াও ৯নং ওয়ার্ড কমলাপুর এলাকার ইউপি সদস্য হাসমত আলীর বাড়ি ঘরে ব্যাপক ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। নজরুল ইসলামের নেতৃত্বে হামলা ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের মাধ্যমে তার বসবাস করার মত কোন অবস্থা নাই বলে জানান স্থানীয়রা।
হাইব্রিড নেতাদের ভয়াবহতার বিষয়ে মুক্তাগাছা থানায় অভিযোগ করেন কাঠ ব্যবসায়ী শফিকুল ইসলাম। এছাড়াও সংখ্যালঘু ওকিলের বাড়ী দখলের বিষয়েও সেনা ক্যাম্পে অভিযোগ করা হয়েছে বলে সূত্রে জানাগেছে। গত ১১ আগষ্ট দুপুরে কাঠ ব্যবসায়ী শফিকুল ইসলামের বাড়িতে ভাঙচুরের ঘটনায় সংবাদ প্রকাশ করা হবে সন্দেহে গণমাধ্যম কর্মীদের প্রায় ৪ ঘন্টা অবরুদ্ধ করে রাখেন সাবেক মেম্বার নজরুল ও তার বাহিনী। এসময় দৈনিক আলোকিত সকাল পত্রিকার সাংবাদিক আজিজুল ইসলামের পূর্বের করা একটি প্রকাশিত সংবাদের জন্য তার গায়ে হাত পর্যন্ত উঠানো হয়। এসময় সাংবাদিকদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ এবং তাদের সাথে থাকা মোবাইল, ক্যামেরাসহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেঁড়ে নেওয়া হয়। পরবর্তীতে সাংবাদিকদের উপর বলপূর্বক একটি ভিডিও ধারণ করে রাখেন সাবেক মেম্বার নজরুল ইসলামের ছোট ভাই তারিকুল। এর পর থেকে আতংক ও মানষিক যন্ত্রণায় দিন কাটাচ্ছে সাংবাদিক ও তাদের পরিবারের সদস্যরা। উক্ত ঘটনার সাথে সম্পৃক্তদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণ করতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন ভুক্তভোগী সাংবাদিকগন।
দলীয় সূত্র বলছে, বিএনপি'র ত্যাগী নেতারা আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নানা ধরনের মামলায় জেলবন্দি ছিলেন। সরকারের পতনের পরপরই দেশের সবাই বিজয় উৎসবে মেতে উঠে। ঠিক তখনই নেতাকর্মীরা পলাতক জীবন থেকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরেছেন। আবার রাষ্ট্রপতির নির্বাহী আদেশে সকল
রাজনৈতিক মামলা থেকে মুক্তি পেয়েছেন। এর পরই সারাদেশে দখলবাজী শুরু হয়। এতে পুরো আন্দোলনে তাদের সফলতা, বিজয় অনেকটা ম্লান হতে থাকে। এমন পরিস্থিতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বিজয়ের দিনই এক ভিডিও বার্তায় নৈরাজ্য বন্ধ করতে কঠোর নির্দেশনা দেন। এতে সারাদেশে সহিংসতা কমলেও বন্ধ হয়নি। তখন দেশবাসী এবং দলের নেতাকর্মীকে উদ্দেশ্য করে সহিংসতা ও নৈরাজ্য বন্ধে সমাবেশের আয়োজন করে দলটি। সমাবেশে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান একই সুরে প্রতিহিংসা বন্ধ করে দেশ গঠনের আহ্বান জানান। ধ্বংস, প্রতিশোধ, প্রতিহিংসা বাদ দিয়ে ভালোবাসা ও শান্তির সমাজ গড়ে তুলতে সবাইকে এগিয়ে আসার নির্দেশনা দেন।
জানা গেছে, আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পরপরই দেশের বিভিন্ন স্থানে দখল ও লুটপাটের নানা খবর আসতে থাকে। আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের বাসাবাড়িতে হামলা, ভাঙচুর অগ্নিসংযোগ সহ বিভিন্ন এলাকায় গণডাকাতি। প্রতিবাদে পাড়া- মহল্লায় পাহারা দিচ্ছেন এলাকাবাসী। এছাড়াও বিভিন্ন এলাকায়
সেনাবাহিনীর হাতে ধরা পড়ছে হাইব্রিড নেতারা। এ রকম শুধু রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বিএনপি নেতাকর্মী পরিচয়ে হাইব্রিড দখলদারের উদয় ঘটেছে বলে বিএনপির নেতারা জানান। অবশ্য এসব অপকর্ম রুখে দেওয়ার জন্য প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় প্রতিরোধ কমিটি গঠন করা হয়েছে।
দলের নেতাকর্মীরা জানান, গত বুধবার ঢাকার সমাবেশ ছিলো সুবিধাভূগীদের দখলে। যারা বিগত সরকারে সঙ্গে নানা সময় দখলবাজী করেছেন ঠিক তারাই এখন বিএনপির হাইব্রিড নেতা। জানা গেছে, রাজধানী ছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্থানে একই ধরনের অভিযোগ
উঠছে। বিগত দিনে জাতীয় পার্টি ও আওয়ামী লীগের রাজনীতি করলেও এখন বিএনপি পরিচয়ে অপকর্ম করছেন। যারা এতদিন আওয়ামী লীগের মিছিল-মিটিংয়ে নিয়মিত ছিলেন, তারা এখন বিএনপির মিছিলে আসছেন। এ ব্যাপারে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী গণমাধ্যমে বলেন, দখলবাজী করলে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। দলের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে এরই মধ্যে নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। সব স্তরেরই কমিটিতে অন্য কোনো রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের যোগদান করানো যাবে না।
এবিষয়ে দৈনিক আলোকিত সকাল পত্রিকার সাংবাদিক আজিজুল ইসলাম বলেন, আমরা ৩ জন গনমাধ্যমকর্মী পেশাগত দায়িত্ব করতে যাওয়ার সময় বৃষ্টি হানা দিলে চরপাড়া এলাকার একটি দোকানে দাঁড়াই। এসময় নজরুল মেম্বারের ছোট ভাই তরিকুল ইসলামের নেতৃত্বে প্রায় ২০-২৫ জন লোক এসে আমাদের অটোতে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় নজরুল মেম্বারের দোকানে। সেখানে প্রায় ৪ ঘন্টা আমাদের অবরুদ্ধ করে রেখে শারীরিক ও মানষিকভাবে নির্যাতন করা হয়। এছাড়াও বলপূর্বক আমাদের একটি ভিডিও ধারণ করা হয়। আমরা এই ঘটনার সঠিক তদন্ত দাবী করার পাশাপাশি প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি এবং ঘটনার সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ পূর্বক শাস্তির আওতায় আনার জোর দাবী জানাচ্ছি।
এবিষয়ে দৈনিক আলোকিত সকাল পত্রিকার সাংবাদিক আজিজুল ইসলাম বলেন, আমরা ৩ জন গনমাধ্যমকর্মী পেশাগত দায়িত্ব করতে যাওয়ার সময় বৃষ্টি হানা দিলে চরপাড়া এলাকার একটি দোকানে দাঁড়াই। এসময় নজরুল মেম্বারের ছোট ভাই তরিকুল ইসলামের নেতৃত্বে প্রায় ২০-২৫ জন লোক এসে আমাদের অটোতে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় নজরুল মেম্বারের দোকানে। সেখানে প্রায় ৪ ঘন্টা আমাদের অবরুদ্ধ করে রেখে শারীরিক ও মানষিকভাবে নির্যাতন করা হয়। এছাড়াও বলপূর্বক আমাদের একটি ভিডিও ধারণ করা হয়। আমরা এই ঘটনার সঠিক তদন্ত দাবী করার পাশাপাশি প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি এবং ঘটনার সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ পূর্বক শাস্তির আওতায় আনার জোর দাবী জানাচ্ছি।
এব্যাপারে অভিযুক্ত সাবেক মেম্বার নজরুল ইসলামের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, কাটবাওলার কিছু পোলাপাইনে এগুলো করেছে। আমি আরো তাদেরকে সেইভ করেছি। আমি কিছুই করিনি।
এব্যাপারে সাবেক ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক মো: আ: লতিফ মাস্টার বলেন, ঘটনাটি খুবই দুঃখজনক। সাবেক মেম্বার নজরুল ইসলাম আমার কমিটির ৬ নং ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। পরবর্তীতে সাবেক এমপি সালাহউদ্দিন আহমেদ মুক্তির হাত ধরে জাতীয় পার্টিতে যোগদান করেন। এবিষয়ে নজরুল মেম্বার আমাকে জানিয়ে ছিলেন যে, মামলা থেকে বাঁচতে তিনি জাতীয় পার্টিতে যোগ দিয়েছিলেন। এখন আওয়ামীলীগ সরকার পতন হওয়ার পর তার ব্যাপক তান্ডব ভাঙচুরে ইউনিয়নজুড়ে আতংক বিরাজ করছে। তবে তিনি পদ ফিরে পেতে এবং জাতীয় পার্টিতে যোগদানের বিষয়টি যাতে প্রকাশ্যে না আসে তাই দাওগাঁও এ ব্যাপক হামলা ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটানো হতে পারে।
এ ব্যাপারে দাওগাঁও ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মাওলানা মোহাম্মদ আঃ লতিফ বলেন, নজরুল মেম্বার আগে বিএনপি করতো। এখন কর্মী হিসেবে আছে। এই ঘটনায় আমি তাকে অনেক কথাবার্তা বলেছি। তবে সাংবাদিকদের ওখানে যাওয়া ঠিক হয়নি। কারণ সারাদেশেই তো ভাঙচুর হয়েছে। কোন নিউজ হয়নি। আমার কথা হলো কাজটা খারাপ হয়েছে। তাকে সহিংসতার পথ পরিহার করতে বলা হয়েছে।
Shohidul Islam
SOMAJER ALO24