লিয়াকত হোসেনঃ
বরেণ্য চিত্রশিল্পী এস এম সুলতানের ১০০তম জন্মদিন আজ শনিবার (১০ আগস্ট)। ১৯২৪ সালের ১০ আগস্ট নড়াইলের মাছিমদিয়ায় বাবা মেছের আলী ও মা মাজু বিবির ঘরে জন্মগ্রহণ করেন এসএম সুলতান।
তবে উইকিপিডিয়া অনুযায়ী আজ তার ১০১তম জন্মদিন।
এদিকে সুলতানের জন্মবর্ষ নিয়ে বিভ্রান্তি চলছে। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী গত বছর (২০২৩) এস এম সুলতানের জন্মশতবর্ষ জাঁকজমকপূর্ণভাবে পালন করেছেন। তবে, নড়াইলবাসীসহ সুলতানপ্রেমীরা তা প্রত্যাখ্যান করে সুলতানের ৯৯তম জন্মবার্ষিক পালন করেন।
এ বছর বর্ণাঢ্য আয়োজনে সুলতানের জন্মশতবর্ষ পালনে সুলতানপ্রেমীরা নড়াইলে ব্যাপক প্রস্তুতি নিলেও দেশে চলমান পরিস্থিতির কারণে তা সম্ভব হচ্ছে না। শুধুমাত্র কোরআন খতম এবং সুলতানের সমাধিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ করা হবে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক ও এস এম সুলতান ফাউন্ডেশনের সভাপতি মোহাম্মাদ আশফাকুল হক চৌধুরী। এ ব্যাপারে আর কোনো বক্তব্য দিতেও রাজি হননি তিনি।
এদিকে সুলতান ফাউন্ডেশনসহ স্থানীয়দের মতে, ১৯২৪ সালের ১০ আগস্ট এস এম সুলতান জন্মগ্রহণ করেন। প্রতিবছর এ হিসেবে জন্মবার্ষিকী পালন হয়ে থাকে। সেই হিসেবে এবার সুলতানের ১০০তম জন্মবার্ষিকী। সুলতানের সমাধি, বিভিন্ন বইপত্র, পত্রিকাসহ সব ধরনের তথ্য-উপাত্তেও সুলতানের জন্ম সাল ১৯২৪ সালের ১০ আগস্ট।
তবে, এ ধরনের তথ্য-উপাত্ত ও নিয়ম উপেক্ষা করে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী গত বছর সুলতানের জন্মশতবার্ষিকী পালন করায় বিক্ষুব্ধ হন সুলতানপ্রেমীরা। এ ঘটনায় বিক্ষুব্ধ নড়াইলবাসী প্রতিবাদ করেও কোনো প্রতিকার পায়নি। লিয়াকত আলী লাকী সুলতানের জন্ম সাল ১৯২৩ উল্লেখ করে গত বছর জন্মশতবর্ষ পালন করেন।
বরেণ্য চিত্রশিল্পী এস এম সুলতান চিত্রশিল্পের মূল্যায়ন হিসেবে ১৯৮২ সালে পেয়েছেন একুশে পদক, ১৯৯৩ সালে স্বাধীনতা পদক, ১৯৮৪ সালে রেসিডেন্ট আর্টিস্ট স্বীকৃতি, ১৯৮৬ সালে বাংলাদেশ চারুশিল্পী সংসদ সম্মাননাসহ ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘ম্যান অব দ্য ইয়ার’, নিউইয়র্কের বায়োগ্রাফিক্যাল সেন্টার থেকে ‘ম্যান অব অ্যাচিভমেন্ট’ এবং এশিয়া উইক পত্রিকা থেকে ‘ম্যান অব এশিয়া’ পুরস্কারসহ বিভিন্ন সম্মাননা পেয়েছেন।
অসুস্থ অবস্থায় ১৯৯৪ সালের ১০ অক্টোবর যশোর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। প্রিয় জন্মভূমি নড়াইলের কুড়িগ্রাম এলাকায় সংগ্রহশালা চত্বরে চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন এসএম সুলতান।
এদিকে নড়াইলের চিত্রা পাড়ের বরেণ্য চিত্রশিল্পী এস এম সুলতানের ১০০তম জন্মদিন পালন করা হয়েছে।
শনিবার (১০ আগস্ট) বর্ণাঢ্য আয়োজনে জন্মশতবর্ষ পালনের প্রস্তুতি থাকলেও দেশের চলমান পরিস্থিতির কারণে সিমিত কর্মসূচির মধ্য দিয়েই পালিত হলো শিল্পীর জন্মদিন।
এ উপলক্ষে শনিবার জেলা প্রশাসন ও এস এম সুলতান ফাউন্ডেশন এবং নড়াইল সুলতান কমপ্লেক্সের আয়োজনে কোরআন খতম, সুলতান কমপ্লেক্সে শিল্পীর মাজারে পুস্পমাল্য অর্পণ ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়।
এদিন সকাল ১০টায় জেলা প্রশাসন ও এস এম সুলতান ফাউন্ডেশন, এস এম সুলতান কমপ্লেক্স, জেলা শিল্পকলা একাডেমি, এস এম সুলতান বেঙ্গল চারু ও কারুকলা মহাবিদ্যালয়, মূর্ছনা সংগীত নিকেতন, চিত্রা থিয়েটার, ভাষা সৈনিক রিজিয়া বেগম স্মৃতি ফাউন্ডেশন ও প্রজন্ম নড়াইল সুলতান কমপ্লেক্সে অবস্থিত শিল্পীর সমাধিতে পুস্পমাল্য অর্পণ করে।
এ সময় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মো. আরাফাত হোসেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তারেক আল মেহেদী, নড়াইল প্রেসক্লাবের সভাপতি অ্যাডভোকেট আলমগীর সিদ্দিকী, নড়াইল সুলতান কমপ্লেক্সের কিউরেটর তন্দ্রা মুখার্জ্জী, চিত্রশিল্পী বিমানেশ বিশ্বাস, এস এম সুলতান বেঙ্গল আর্ট কলেজের অধ্যক্ষ সুবর্ণা রায়সহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ও সামাজিক ব্যক্তিত্ব উপস্থিত ছিলেন।
১৯২৪ সালের ১০ আগস্ট নড়াইল শহরের মাছিমদিয়ায় এক অসচ্ছল পরিবারে বরেণ্য এই শিল্পীর জন্ম। তার বাবা ছিলেন একজন সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ, পেশায় রাজমিস্ত্রি। এস এম সুলতান হওয়ার আগে তার নাম ছিল লাল মিঞা।
শিল্পী সুলতান ১৯৮২ সালে একুশে পদক, ১৯৯৩ সালে স্বাধীনতা পদক, ১৯৮৪ সালে রেসিডেন্ট আর্টিস্ট স্বীকৃতি, ১৯৮৬ সালে বাংলাদেশ চারুশিল্পী সংসদ সম্মাননাসহ ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘ম্যান অব দ্য ইয়ার’, নিউইয়র্কের বায়োগ্রাফিক্যাল সেন্টার থেকে ‘ম্যান অব অ্যাচিভমেন্ট’ এবং এশিয়া উইক পত্রিকা থেকে ‘ম্যান অব এশিয়া’ পুরস্কারসহ অসংখ্য সম্মাননা পেয়েছেন। ১৯৯৪ সালের ১০ অক্টোবর তার মৃত্যু হয়।
Shohidul Islam
SOMAJER ALO24