ভাঙ্গা (ফরিদপুর) প্রতিনিধিঃ
ফরিদপুরের ভাঙ্গায় কাজী শামসুন্নেছা পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সেই প্রধান শিক্ষক অরুণ চন্দ্র দত্তের বিরুদ্ধে সেচ্ছাচারিতা, অনিয়ম ও দূর্ণীতির অভিযোগে তথ্য চাওয়ায় দুই সংবাদকর্মীকে গালিগালাজ করার জন্য কারণ দর্শানোর নোটিশের জবাব দিয়েছেন অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক অরুন চন্দ্র দত্ত। আজ বুধবার (০৬ জুন) সকালে এ প্রতিবেদককে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন ইএনও বিএম কুদরত-এ-খুদা।
গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ভাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বিএম কুদরত-এ-খূদার কাছে নোটিশের জবাব দেন অরুন চন্দ্র। তবে, কারণ দর্শনোর নোটিশের যথাযথ সদুত্তর পান নি বলেও মন্তব্য করেছেন- ইউএনও বিএম কুদরত-এ-খুদা। এর আগে গত ২৩ মে অরুন চন্দ্র দত্তকে কারণ দর্শনোর জন্য নোটিশ করেন ইউএনও। ওই নোটিশের জবাব ওই দিন থেকে পরবর্তী ০৫ (পাঁচ) কার্যদিবসের মধ্যে লিখিতভাবে অত্র দপ্তরে দাখিল করার জন্য প্রধান শিক্ষক অরুন চন্দ্র দত্তকে নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু, নির্ধারিত সময় অতিবাহিত হওয়ার ৮ দিন পর নোটিশের জবাব দিলেন অভিযুক্ত শিক্ষক অরুন চন্দ্র। সময়মত অত্র দপ্তরে নোটিশের জবাব না দেওয়ায়, স্থানীয় সংবাদকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
কয়েকজন সংবাদকর্মী ও স্থানীয়দের অভিযোগ- ইউএনও’র নোটিশের নির্ধারিত সময় অতিবাহিত হওয়ার ৮ দিন পরে কেন নোটিশের জবাব দিয়েছেন অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক অরুন চন্দ্র দত্ত? প্রকাশ্যে তাঁর এহেন খারাপ আচরণ যা এখনো সোস্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হচ্ছে। অথচ, তাঁর বিরুদ্ধে কেন দ্রুত কোন পদক্ষেপ নেওয়া হয় নি। তাহলে- অরুন চন্দ্রের খুঁটির জোর কোথায় ? এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তারা।
প্রধাণ শিক্ষক অরুন চন্দ্রের বিরুদ্ধে কারণ দর্শানোর নোটিশের জবাবের বরাত দিয়ে ইউএনও বলেন, সংবাদকর্মীদের গালিগালাজ করার জন্য কারণ দর্শনোর নোটিশের জবাব দিয়েছেন প্রধান শিক্ষক অরুন চন্দ্র দত্ত। তিনি তাঁর লিখিত জবাবে ওই দিনের পুরো ঘটনাটি উল্ল্যেখ করেছেন এবং তিনি লিখিত জবাবে বলেন- সাংবাদিকরা আমার কাছে এসেছিলো। তাদের সঙ্গে একজন শিক্ষক হিসেবে তাঁর এমন আচরন করা ঠিক হয় নি। ইউএনও জানান- অরুন চন্দ্রের লিখিত জবাবে তিনি খুব একটা খুশি নন। খুবই সিম্পুল জবাব দিয়েছেন অরুন চন্দ্র দত্ত। আগামীকাল বৃহষ্পতিবার ডিসি স্যারের কাছে বিষয়টি তিনি জানাবেন এবং অরুন দত্তের লিখিত জবাবটিও পাঠানো হবে। ইউএনও আরও বলেন, এছাড়াও অরুন চন্দ্র দত্তের বিরুদ্ধে সম্প্রতী আরও কয়েকটি অভিযোগের বিষয়ে তাঁর ডিপার্টমেন্টাল তদন্তকার্য চলছে।
গত ২৩ মে নোটিশে যা বলা হয়, অরুন চন্দ্র দত্ত, প্রধান শিক্ষক, কাজী শামসুন্নেছা পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, ভাঙ্গা ফরিদপুর, আপনার নিকট গনমাধ্যম কর্মী সংবাদ সংগ্রহের জন্য তথ্য প্রদানের অনুরোধ করলে আপনি তাদেরকে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করেন এবং অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন যা ভিডিও ফুটেজ এবং বিভিন্ন জাতীয় ও দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের মাধ্যমে জানা যায়। আপনার এ ধরনের আচরনে কাজী শামসুন্নেছা পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়হ উপজেলার সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষক মন্ডলীর ভাবমূর্তী ক্ষুন্ন হয়েছে। আপনার এহেন আচরণ অসদাচরণ বলে প্রতীয়মান হয়। এমতাবস্থায় আপনার বিরুদ্ধে কেন বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করা হবে না তা আগামী ০৫ (পাঁচ) কার্যদিবসের মধ্যে লিখিতভাবে নি¤œস্বাক্ষরকারীর দপ্তরে দাখিল করার জন্য অনুরোধ করা হয়।
উল্লেখ্য, গত (২০ মে) বিকেলে প্রধান শিক্ষক অরুন চন্দ্রের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দূর্ণীতির তথ্য জানতে চাওয়ায় দুইজন সংবাদকর্মীকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল ও হেনস্থা করা হয়। এ ঘটনার একটি ভিডিও সোস্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়। এ নিয়ে বিভিন্ন গনমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়।
এ ঘটনায় ওই দিন রাতেই ভাঙ্গা থানায় প্রধান শিক্ষক অরুন চন্দ্রের বিরুদ্ধে আইনগত বিচার দাবি করে ভাঙ্গা থানায় আরও একটি লিখিত অভিযোগ দেন মোঃ আক্তারুজ্জামান।
এরপর দিন (২১ মে) ভাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসার, ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক ও উপ-পরিচালক দূর্ণীতি দমন কমিশন ফরিদপুর বরাবর প্রধান শিক্ষক অরুন চন্দ্রের বিরুদ্ধে সেচ্ছাচারিতা, পরিচ্ছন্নকর্মী নিয়োগে অনিয়মসহ ব্যাপক দূর্ণীতি প্রসঙ্গে লিখিত অভিযোগপত্র দিয়েছেন হেনস্তার শিকার সাংবাদিক আক্তারুজ্জামান সোহেল। এরপর ২৩ মে অরুন চন্দ্র দত্তকে কারণ দর্শনোর জন্য নোটিশ করেন ইউএনও বিএম কুদরত-এ-খুদা।
Shohidul Islam
SOMAJER ALO24