লিয়াকত হোসেনঃ
ফরিদপুর শহরের অম্বিকাপুরের গোবিন্দপুর গ্রামে কুমার নদের পাড়ে পল্লী কবির বাড়ির সামনে কবির স্মরণে জসীম পল্লী মেলার উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রনালয়ের উপদেষ্টা ও পল্লীকবির কবির জামাতা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, বীর বীক্রম।
আজ (২ ফেব্রুয়ারি) শুক্রবার বিকেল ৪টার দিকে ফরিদপুর জেলা প্রশাসন ও জসীম ফাউন্ডেশনের আয়োজনে বেলুন উড়িয়ে ১৯ দিনব্যাপী এ মেলার শুভ উদ্বোধন করা হয়।
উদ্বোধন শেষে মেলার মঞ্চে জেলা প্রশাসক ও জসীম ফাউন্ডেশনের সভাপতি মো. কামরুল আহসান তালুকদারের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন ফরিদপুর-২ আসনের এমপি শাহাদাব আকবর চৌধুরী লাবু, ফরিদপুর-৩ (সদর) আসনের এমপি ও হা-মীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ. কে. আজাদ, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোর্শেদ আলম। বরেণ্য অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন কবি পুত্র ড. খুরশিদ আনোয়ার।এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন কবি পুত্র ড. জামাল আনোয়ার ও কবি কন্যা আসমা জসীম উদ্দীন তৌফিক।
মেলার প্রধান অতিথি ও উদ্বোধক প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ও কবির জামাতা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী (বীর বীক্রম) বলেন, পল্লীকবি জসীমউদ্দীন ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মধ্যে একটা আত্মীক সম্পর্ক ছিল। বঙ্গবন্ধু তাকে বড় ভাই বলে ডাকতেন। বঙ্গবন্ধুকে রাজনীতির কবি বলা হয় আর জসীমউদ্দীন ছিলেন সাহিত্যের কবি। আবহমান বাংলাদেশ বিলুপ্ত হতে বসেছে। পরিবর্তন আসবে কিন্তু কবিরা যে সাহিত্য সৃষ্টি করে যান, তার মধ্যে আবহমান বাংলা বেঁচে থাকবে।
তিনি বলেন, ফরিদপুরে গ্যাস দেওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। গ্যাসের পাইপলাইন এসে গেছে। তবে পৃথিবী সংঘাতপূর্ণ হওয়ায় আমাদের কাজে বিলম্ব হচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্য ও ইউক্রেন সংকট তো আমরা উপেক্ষা করতে পারি না। পৃথিবী শান্ত হলে আমরা গ্যাস দিতে পারবো।
তৌফিক-ই-ইলাহী বলেন, মানুষের জীবন সংগ্রাম, সমাজের শোষণ নিপীড়ন, দরিদ্র মানুষের দৈনন্দিন জীবনের কষ্টের কথকতা, মানুষে মানুষে বৈষম্য ও ভেদাভেদের কথা ছবির মত ফুটে উঠেছে কবির অমর সব সাহিত্য রচনায়। তিনি ছিলেন অসাম্প্রদায়িক চেতনা ও সমতার পক্ষের প্রকৃতিপ্রেমী একজন সার্বজনীন কথাসাহিত্যিক।
ফরিদপুর-৩ (সদর) আসনের এমপি ও হা-মীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ. কে. আজাদ বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বলেন, পল্লীকবি জসীম উদ্দীন ফরিদপুরের ঐশ্বর্যকে সারা বাংলায় ছড়িয়ে দিয়েছিলেন, পৌঁছে দেন সারা বিশ্বে। তার অমর সব সাহিত্যকর্ম দিয়ে বাংলার সাধারণ মানুষের মন জয় করে নিয়েছিলেন। তার স্মরণে প্রতিবছর গ্রামীণ মেলা করতে পেরে আমরা ফরিদপুরবাসী গর্বিত বোধ করি। এর পাশাপাশি এই মেলার মাধ্যমে সারা দেশের মানুষের কাছে কবির জীবন ও কর্মের কথা ছড়িয়ে দিতে পারি।
এ. কে. আজাদ আরও বলেন, আমরা সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজমুক্ত ফরিদপুর চাই। ইতোমধ্যে ফরিদপুরের জেলা ও পুলিশ প্রশাসন এই ব্যাপারে আমাদের আশ্বস্ত করেছে। তিনি বলেন, এই মঞ্চে ফরিদপুর-২-এর এমপি শাহাদাব আকবর চৌধুরীসহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা রয়েছেন। ইতোমধ্যেই জেলা আইনশৃঙ্খলা কামিটর সভায় এ ব্যাপারে আমরা একমত হয়েছি, কাজও শুরু করেছি।
ফরিদপুর অঞ্চলের যোগাযোগ, শিল্প ও বাণিজ্য এবং শিক্ষার মান উন্নয়নের ব্যাপারে ইঙ্গিত দিয়ে এমপি এ. কে. আজাদ বলেন, এই অঞ্চলের মানুষের কর্মসংস্থানের জন্য সমন্বিতভাবে আমরা কাজ করবো। সেই লক্ষে দক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলতে শুরু করা হয়েছে, হাতে কলমে প্রশিক্ষণের পাশাপাশি মানসম্মত শিক্ষাকে এগিয়ে নিতে আমরা কাজ করবো।
তিনি বলেন, এবার জনগণ তাদের পছন্দের মানুষকে ভোট দিতে পেরেছেন। তাই তাদের কাছে দেওয়া আমার ওয়াদা পূরণ করতে আমি বদ্ধ পরিকর।
জেলা প্রশাসক ও জসীম ফাউন্ডেশনের সভাপতি মো. কামরুল আহসান তালুকদার বলেন, জসীম পল্লীমেলা শুধু ফরিদপুরের নয়, সারাদেশের একটি অন্য সাধারণ আয়োজন। এ বছর জাতীয় নির্বাচনের কারণে বিলম্বে মেলা শুরু হলেও আগামী বছর থেকে পহেলা জানুয়ারি কবির জন্মদিন থেকেই আমরা মেলা শুরু করার চেষ্টা করবো।
তিনি বলেন, সরকার, জসীম ফাউন্ডেশন ও পল্লীকবির পরিবারের সদস্যদের যৌথ উদ্যোগে জসীম পল্লীমেলার এ আয়োজন দেশের সবার দৃষ্টি কেড়েছে। তাই প্রতি বছরই বাড়ছে মেলার পরিধি ও দর্শনার্থী।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্যে দেন স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক চৌধুরী রওশন ইসলাম, অম্বিকাপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নুরুল আলম। এ সময় হা-মীম গ্রুপের চেয়ারম্যান মোতালেব হোসেন, হা-মীম গ্রুপ পরিচালক বেলাল হোসেন, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শওকত আলী জাহিদ, সমাজসেবক শায়মা আজাদ শাম্মি, শায়লা ইসলামসহ আওয়ামী ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মী, সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের প্রধান ও মেলায় আগত দর্শনার্ধীরা।মেলায় প্রায় ২ শত স্টল তাদের গ্রামীণ নানা পসরা সাজিয়েছে।
ছোটদের বিনোদনের জন্য মেলায় সার্কাস, নাগোরদোলা, ভুতেরবাড়িসহ বিভিন্ন রাইড বসেছে ।এছাড়াও মেলার ২২০টি স্টলে থাকছে হস্ত, মৃৎ, বাঁশ ও বেত শিল্পসহ গ্রামীণ মানুষের ব্যবহৃত নিত্যদিনের জিনিসপত্র।
এদিকে মেলার ৯ং স্টলে জেলা প্রশাসন ও জসীম ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে পল্লীকবি জসীম উদদীনের অমর সৃ্ষ্টি নকশী কাথার মাঠ, সুজন বাদীয়ার ঘাটসহ কবির লেখা সকল গ্রন্থ প্রদর্শিত হয়েছে।এ স্টলটি পরিচালনা করছেন ফরিদপুর লেখক পরিষদের সভাপতি ও কাশফুল সাহিত্য বইঘরের পরিচালক আব্দুর রাজ্জাক রাজা।এছাড়াও এ স্টলে আব্দুর রাজ্জাক রাজার কবিতা, সাহিত্য ও ফরিদপুরের ইতিহাস-ঐতিহ্য নিয়ে লেখা বই প্রদর্শিত হয়েছে।
এরপর সন্ধ্যায় মেলার মঞ্চে এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে জাতীয় ও স্থানীয় বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের শিল্পীবৃন্দ পল্লীর জারি, সারি, ভাটিয়ালি ও পল্লীকবির লেখা গান গেয়ে ও এসব গানে নৃত্য পরিবেশন করে দর্শক মাতিয়ে তুলে।এছাড়া গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর নানা কাহিনী নিয়ে নাটক মঞ্চায়িত হয়। উল্লেখ্য, মেলার জসীম মঞ্চে প্রতিদিন সন্ধ্যায় জাতীয় ও স্থানীয় সাংস্কৃতিক সংগঠন পল্লীর জারি, সারি, ভাটিয়ালি গান, কবিতা আবৃত্তি ও নাটক পরিবেশন করবে।এ আয়োজনে ফরিদপুরসহ অন্যান্য জেলার সাংস্কৃতিক দলগুলো অংশ নেবে।
Shohidul Islam
SOMAJER ALO24