ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলায় টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ নির্মাণ প্রকল্পে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। কালক্ষেপণ ও বিভিন্ন জটিলতার কারণে দীর্ঘ দুই বছর এ প্রকল্পের কাজ বন্ধ থাকলেও গত কয়েকদিন ধরে ফের ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে।
সূত্র জানায়, প্রথম দফায় দেড় বছরের কাজ প্রায় সাড়ে ৪ বছরেও শেষ করা যায়নি। সর্বশেষ বেঁধে দেওয়া সময়সীমার মধ্যেও কাজ শেষ করা যাবে কিনা, তাও অনিশ্চিত। অভিযোগ উঠেছে, ভবনটি নির্মাণে দীর্ঘসূত্রতার পেছনে প্রকল্প-সংশ্লিষ্টদের অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতি দায়ী। প্রকল্পের সময় ও ব্যয় বাড়িয়ে টাকা লোপাটের উদ্দেশ্যেই ধীরগতিতে নির্মাণকাজ চালানো হচ্ছে। শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর (ইইডি) ফরিদপুরের দায়িত্বরত সাবেক কর্মকর্তা ও আলাউদ্দিন ট্রেডিং কোম্পানির ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানসহ সংশ্লিষ্টদের দিকেই অভিযোগের তীর।
তবে, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর (ইইডি), ফরিদপুর এক্সচেঞ্জের কর্মকর্তা আফজাল হোসেনের ভাষ্য– এ প্রকল্পের কাজের চুক্তিমূল্যের চেয়ে ঠিকাদার প্রায় ৪০ লাখ টাকা বেশি দাবি করে এ দপ্তরের বিরুদ্ধে মামলা করায় ভাঙ্গা টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের নির্মাণকাজটি দীর্ঘদিন বন্ধ ছিল। পরে এ বিষয়ে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে এ দপ্তরের পক্ষ থেকেও মামলা করা হয়। এক পর্যায়ে, আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী আগের চুক্তিমূল্যেই আলাউদ্দিন ট্রেডিং কোম্পানিকে পুনরায় আরও এক বছর বাড়িয়ে দিয়ে প্রকল্পের কাজ শেষ করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
আফজাল হোসেনের দাবি, এতে কোনো অনিয়ম বা দুর্নীতি হয়নি। বরং তিনি এ দপ্তরে দায়িত্ব পাওয়ার পর বন্ধ হওয়া কাজটি শুরু করেছেন। এতে আগামী বছর জুনের মধ্যে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি প্রকল্পের কাজ শেষ করতে না পারলে তাঁর বিরুদ্ধে আইনি প্রক্রিয়ায় জরিমানা করা হবে।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আলাউদ্দিন ট্রেডিং কোম্পানির স্বত্বাধিকারী সিদ্দিকুর রহমানের দাবি, প্রকল্পের কাজ শুরু করার পর করোনা মহামারিসহ দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি হওয়ায় শ্রমিকরা সঠিক সময়ের মধ্যে কাজটি সম্পন্ন করতে পারেনি। এ ছাড়া প্রকল্পটিতে কিছু কাজ নতুনভাবে সংযোজন হওয়ায় নির্ধারিত চুক্তিমূল্যের চেয়ে আরও কিছু টাকার প্রয়োজন হওয়ায় কিছু জটিলতা সৃষ্টি হয়। এতে কয়েক মাস প্রকল্পের কাজ বন্ধ ছিল। তবে আগামী এক বছরের মধ্যে এ কাজটি পুরোপুরি সম্পন্ন করা হবে বলে জানান তিনি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে ১০০টি উপজেলায় একটি করে টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজ স্থাপন (১ম সংশোধিত) শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর (ইইডি), ফরিদপুরের কারিগরি সহযোগিতায় ফরিদপুর-ভাঙ্গা-বরিশাল মহাসড়ক-সংলগ্ন পৌরসভার পূর্ব শদরদী গ্রামে কয়েক একর জমির ওপরে এ প্রকল্পের কাজ শুরু করা হয়। যার চুক্তিমূল্য ১৯ কোটি ৫৭ লাখ ৬৭ হাজার ৬২৫ টাকা। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারির ২০ তারিখে এ প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। সাড়ে চার বছর পার হলেও প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন হয়েছে মাত্র ২৫-৩০ শতাংশ।
স্থানীয় বাসিন্দা জাহিদ শিকদার জানান, এমপি নিক্সন চৌধুরীর ডিও লেটারের মাধ্যমে এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে এ গ্রামে স্থাপন করা হয়েছে। অথচ, এ প্রকল্পের কাজের শুরু থেকেই বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কিছু অসাধু কর্মকর্তা ও ঠিকাদারের বিরুদ্ধে। ফলে প্রায় দুই বছর এ কাজটি বন্ধ ও পরিত্যক্ত অবস্থায় থাকে।
এ প্রকল্পের কাজ ইতোমধ্যে আশপাশের জেলা ও উপজেলায় শেষ হয়ে সেখানকার শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়ে গেছে অথচ ভাঙ্গায় কাজই সমাপ্ত হয়নি। দ্রুত সময়ের মধ্যে এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির নির্মাণ শেষ হলে এ অঞ্চলের শিক্ষার মান উন্নয়ন হবে।
স্থানীয় শহীদুল মোল্লাসহ কয়েকজন অভিযোগ করেন, ভবন নির্মাণের কাজ প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকায় দুইতলা বিল্ডিংয়ের লোহার রডগুলোতে জং, বিল্ডিংয়ের ইট, পিলারগুলোতে শ্যাওলা ধরেছে ও সীমানাপ্রাচীর ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তার অব্যবস্থাপনা ও দায়িত্বে অবহেলায় এমন ক্ষতি হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আজিম উদ্দিন জানান, এ প্রকল্পের কাজের অনিয়ম ও দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার বিষয়ে জানতে ফরিদপুরের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সঙ্গে কথা বলে তিনি জানতে পারেন, এ কাজের ঠিকাদারের অর্থনৈতিক সমস্যার কারণে কাজটি যথাসময়ে সম্পূর্ণ করা যায়নি। তবে, কাজটি যেহেতু শুরু হয়েছে তাই প্রশাসনের পক্ষ থেকে কাজের গুণগতমান নিশ্চিত করতে দেখভাল করা হবে।
শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর (ইইডি), ফরিদপুর এক্সচেঞ্জের সাবেক কর্মকর্তা মো. আরিফুজ্জামান মুঠোফোনে জানান, তিনি ফরিদপুরে থাকাকালীন ভাঙ্গায় টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ নির্মাণে কোনো অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়নি। এসব অভিযোগের তথ্য ভুল ও মিথ্যা। এই বলে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে মোবাইল ফোনের সংযোললিয়াকত হোসেন গ বিচ্ছিন্ন করে দেন।
Shohidul Islam
SOMAJER ALO24