যাতায়াতের মাধ্যম হিসেবে সবচেয়ে নিরাপদ মনে করা হয় ট্রেনকে। তবে ফরিদপুর-ভাঙ্গা রেলপথে যাত্রীরা থাকেন ভিন্নরকম আতঙ্কে– কখন তাদের দিকে ছুটে আসে পাথরবৃষ্টি! অজ্ঞাতপরিচয় দুর্বৃত্তের ছোড়া পাথরে প্রায়ই আহত হচ্ছেন যাত্রীরা। ছয় মাসে কমপক্ষে ২০ জন আহত হয়েছেন। পাশাপাশি চুরির ঘটনাও বেড়েছে। রেলপথের প্রায় দেড় কিলোমিটার এলাকায় ১ হাজার ৬০০টি ক্লিপ চুরি হয়েছে। এসব ঘটনায় এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার
করা যায়নি। পাথর নিক্ষেপকারীদের ধরিয়ে দিলে ১০ হাজার টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছে রেলওয়ে পুলিশ। চলতি মাসে একাধিকবার ট্রেনে পাথর ছোড়ার ঘটনা ঘটেছে। সর্বশেষ গত ১১ অক্টোবর রাত ৮টার দিকে ফরিদপুর থেকে ভাঙ্গাগামী ট্রেন বাখুণ্ডায় পৌঁছলে ট্রেনে বৃষ্টির মতো পাথর পড়তে থাকে। এসব পাথরের কোনোটি জানালা, কোনোটি দরজা দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে। সাত-আট যাত্রী আহত হন। রাজবাড়ী এক্সপ্রেস ট্রেনটি ফরিদপুর থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় ভাঙ্গার উদ্দেশে ছেড়ে যায়। রেলপথের কয়েকটি নিভৃত পয়েন্টে এ দুর্বৃত্তরা অবস্থান নেয়। কী কারণে তারা পাথর নিক্ষেপ করে, তা জানা যায় না।
এর আগে গত ২০ সেপ্টেম্বর ভাঙ্গা উপজেলার নওপাড়া এলাকায় রেলপথের ১ হাজার ৬০০টি ক্লিপ খুলে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। রাতে অল্পের জন্য দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পায় ট্রেন। ট্রেনের যাত্রী সোহাগ মাতুব্বর বলেন, তাঁর বোন ও দুলাভাই ফরিদপুর শহরের থাকেন। প্রায়ই তিনি ভাঙ্গা থেকে ট্রেনে ফরিদপুর যান। সন্ধ্যায় ফিরে আসেন। কয়েকদিন তাঁর সামনেই ট্রেনে পাথর নিক্ষেপ হয়েছে। একদিন তিনিও আহত হয়েছেন। সোহাগ বলেন, এ রুটে রেল কর্তৃপক্ষের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করা উচিত। রেলপথের পরিধি বাড়ছে, নিরাপত্তার পরিধিও বাড়াতে হবে। তা না হলে রেলের যাত্রী কমে যাবে। ফরিদপুরে দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সাধারণ সম্পাদক হাসানউজ্জামান বলেন, কয়েকদিন আগে রেলের ক্লিপ খুলে নিয়ে গেছে। পাঁচ ঘণ্টা ট্রেন বন্ধ রাখার পর ক্লিপ লাগিয়ে ফের চলাচল শুরু করে। রেলযাত্রী রমা খান বলেন, তিনি কর্মজীবী নারী। রেলে যাতায়াতে নিরাপদ ও স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। কিন্তু মাঝেমধ্যেই পাথর নিক্ষেপ করা হচ্ছে। ভয়ে অনেকে সন্ধ্যার ট্রেনে যাতায়াত বন্ধ করে দিয়েছেন। প্রায়ই এ ধরনের ঘটনা ঘটলেও কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
ভাঙ্গার স্টেশন মাস্টার মো. শাহজাহান বলেন, এ রুটে দুটি লোকাল ও একটি আন্তঃনগর ট্রেন চলাচল করছে। রাজশাহী থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত একটি ট্রেন চলে। লোকাল ট্রেনটি সকালে ও সন্ধ্যায় রাজবাড়ী থেকে ফরিদপুর হয়ে ভাঙ্গায় আসে। তিনি জানান, ফরিদপুর-ভাঙ্গা রেলপথের কয়েকটি পয়েন্ট নির্জন এলাকা। ওই এলাকাগুলোতেই পাথর নিক্ষেপের ঘটনা ঘটছে। জনসচেতনতা বাড়াতে প্রচারণা চালানো হচ্ছে। ফরিদপুর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন বলেন, কিছু দুর্বৃত্ত রেলে পাথর নিক্ষেপের ঘটনা ঘটাচ্ছে। তাদের খুঁজে বের করতে রেল কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানাই। সহযোগিতা লাগলে তাদের সঙ্গে কাজ করব।
রাজবাড়ী রেলওয়ে থানার ওসি সোমনাথ বসু বলেন, রেলে পাথর নিক্ষেপের বিষয়টিও গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। জড়িতদের খুঁজে বের করতে টহল জোরদার করা হয়েছে। ছয় মাসে ২০ জন আহত হয়েছেন। প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে। রেলপাতের ক্লিপ চুরির ঘটনায় মামলা হয়েছে।
রেলওয়ে আইনের ১২৭ ধারা অনুযায়ী ট্রেনে পাথর নিক্ষেপ করা হলে সর্বোচ্চ যাবজ্জীবন কারাদণ্ডসহ ১০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান আছে। ৩০২ ধারা অনুযায়ী, পাথর নিক্ষেপে কারও মৃত্যু হলে মৃত্যুদণ্ডের বিধানও আছে। তবে শাস্তির বিধান থাকলেও বাস্তবে কারও শাস্তি হয়েছে– এমন নজির খুব একটা নেই। ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক মো. কামরুল আহসান তালুকদার বলেন, বিষয়টি খুবই উদ্বেগজনক। রেলযাত্রা নিরাপদ করতে স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
Shohidul Islam
SOMAJER ALO24