তিন মাস ১০ দিনের মাথায় অবশেষে খোঁজ মিলেছে পদ্মা সেতুতে অটোরিকশা নিয়ে ওঠার পর নদীতে ঝাঁপ দেওয়া চালকের। রোববার দুপুরে পদ্মা সেতু উত্তর থানায় হাজির হন ওই যুবক। তাঁর নাম শরীফুল ইসলাম (২৯)। বাড়ি বাগেরহাটের মোল্লাহাট উপজেলার উদয়পুর উত্তরকান্দি গ্রামে। শরীফুলের দাবি, নিরাপত্তাকর্মীরা গুলি করতে পারেন, এমন ভয়ে নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়েন। রাতভর সাঁতরে সকালে মাওয়া প্রান্ত থেকে দূরে তীরে উঠেছিলেন।
ঢাকার হাজারীবাগে থাকতেন শরীফুল। সেখানেই রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। গত ১৮ জুন রাতে পারিবারিক কলহের জেরে বাসা থেকে বের হন। চেয়েছিলেন রিকশা নিয়ে ঢাকা থেকে বাগেরহাটে গ্রামের বাড়িতে চলে যাবেন। মাওয়া প্রান্ত দিয়ে রিকশা চালিয়ে পদ্মা সেতুতে উঠে পড়েন। একপর্যায়ে একটি যানে ধাক্কা লাগলে নিরাপত্তাকর্মীরা তাঁকে ধাওয়া করেন। এ সময় গুলির ভয়ে রিকশা রেখেই সেতু থেকে নদীতে ঝাঁপ দেন।
পরে বর্ণনাও দেন শরীফুল। তিনি বলেন, ‘রাতভর নদীতে ভেসেছিলাম। অনেক ঢেউ ছিল, কোনো কূলকিনারা খুঁজে পাইনি। নিজের মতো সাঁতরাচ্ছিলাম। সকালে মাওয়া প্রান্ত থেকে দূরের একটি এলাকায় উঠি।’ পরে বাসে উঠে তিনি বাড়িতে ফিরে ঘটনার কথা জানান। তবে পরিবারের কেউ তা বিশ্বাস করেননি। সবাই বলেছিলেন, তিনি রিকশা চুরি করে বিক্রি করে দিয়েছেন। ঋণের টাকায় রিকশাটি কিনেছিলেন। পরে খোঁজ নিয়ে শরীফুল জানতে পারেন, সেটি পুলিশের হেফাজতে রয়েছে। এ জন্য পদ্মা সেতু উত্তর থানায় আসেন।
তিনি বলেন, ‘বাড়ির লোকজন মনে করেছে যে, আমি রিকশা বিক্রি করে টাকা খেয়ে ফেলেছি। আমি টাকা খরচ করিনি, এটা প্রমাণ করতেই রিকশা নিয়ে দেখাতে চাই।’
রোববার শরীফুলের সঙ্গে পদ্মা সেতু উত্তর থানায় আসেন শ্বশুর মোহাম্মদ দাউদ মোল্লা। তিনি বলেন, ‘ঘটনাটি আমাদের কাছে (শরীফুল) বলার পর বিশ্বাস করতে পারিনি। কারণ, পদ্মা সেতুতে থেকে ঝাঁপ দিয়ে জীবিত ফিরে আসা নিয়ে সন্দেহ লেগেছিল।’
তিনি আরও জানান, শরীফুলের মানসিক কিছু সমস্যা ছিল। এ ঘটনার পরও অনেকদিন পর্যন্ত তিনি বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। থানায় এসে তারা দেখেন রিকশাটি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে।
শরীফুল সাংবাদিকদের সামনে দাবি করেন, অটোরিকশার ব্যাটারির গায়ে মার্কারপেন দিয়ে ইংরেজিতে কয়েকটি আদ্যাক্ষর তাঁর হাতে লেখা। পরে দীর্ঘদিন জমে থাকা ধুলা সরিয়ে এ দাবির সত্যতা পাওয়া যায়।
এদিন সন্ধ্যায় থানার ওসি আলমগীর হোসাইন জানান, শরীফুলের রিকশার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে মাদারীপুরের শিবচর থানা পুলিশ। নদীতে ঝাঁপ দেওয়ার ঘটনায় ওই থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছিল। পরে দাউদ মোল্লা বলেন, শিবচর থানা থেকে রিকশাটি নেওয়ার জন্য ছাড়পত্র এনেছেন।
Shohidul Islam
SOMAJER ALO24