জাল জালিয়াতির মাধ্যমে ভুয়া নিলাম , দলিল ও পর্চা সৃষ্টি করে অন্যের জমি আত্মসাতের চেষ্টার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় বরিশালের বাকেরগঞ্জের চরআউলিয়াপুর গ্রামের করম আলী মৃধার মেয়ে হালিমা বেগমকে দোষী ও তার নামীয় নিলাম , পর্চা জাল হিসেবে রায় ঘোষণা করেছেন আদালত। সোমবার (১৮ সেপ্টেম্বর ) বরিশালের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মহিবুল হাসান সি আর মামলা ৪২৯/২০২১ এর রায় ঘোষণা করেন। মামলার রায়ে তিনি হালিমা বেগম এর নামীয় সকল,নিলাম ,পর্চা এবং নামীয় সকল রেকর্ড ভুয়া এবং জাল বলে ঘোষণা করেন।
এ ছাড়াও হালিমা বেগমের ৫ সন্তানকে ভবিষ্যতে এ ধরনের জাল দলিলপত্র ব্যবহার না করতে সর্তক করেছেন। হালিমা ছাড় অন্য আসামিরা হলেন হারুন হাওলাদার,শিপন হাওলাদার,লিটন হাওলাদার,ফারুক হাওলাদার এবং ফোরকান হাওলাদার। আসামিরা সবাই চরআউলিয়াপুর গ্রামের মৃত ফকরুদ্দিন হাওলাদারের স্ত্রী ও ছেলে। এছাড়া মামলার ১ নং আসামি হালিমা বেগমকে মূল অভিযুক্ত হিসেবে আদালত রায় ঘোষণা করেন।কিন্তু হালিমা বেগম বিচারকার্য চলাকালিন মৃত্যবরন করার কারণে তাকে সাজা দেওয়া সম্ভব নয় বলে জানান। আদালত সূত্র জানায়, বাদি এবং আসামিরা পরস্পর সম্পর্কে চাচাতো ভাই। বাদির পিতা অভাবের কারণে ৩২ বছর আগে ১৯৯১ সনে ঢাকা চলে গেলে তার স্থাবর/অস্থাবর সম্পত্তি দেখা শুনার দায়িত্বে ছিল তারই আপন চাচাতো ভাই মৃত ফকরুদ্দিন হাওলাদার। এক পর্যায়ে দেখা শুনার দায়িত্বে থাকা সম্পত্তিতে তার নজর পড়ে। তাই তিনি উক্ত সম্পত্তি পত্তন মূলে নিজের বলে দাবি করে আদালতে সত্য ঘোষণার মিথ্যে মামলা করেন। আদালত মামলাটি খারিজ করে দিলে স্থানীয় বিচার শালিশের মাধ্যমে সমাধান হয়। ফকরুদ্দিন মৃত্যুবরন করলে তার মৃত্যুতে স্ত্রী হালিমা বেগম এবং ৫ ছেলেকে রেখে যান। এদিকে বাদির পিতারও মৃত্যু হলে ওয়ারিশ হিসেবে তার রেখে যাওয়া সন্তারা জমি জমা বুঝে পেতে চাইলে আসামিরা তার মা-এর নামীয় জাল নিলাম ,জাল পর্চা, ভুয়া দাখিলা তৈরী করে ৫ ভাই সম্পত্তি নিজেদের মধ্যে হেবা ঘোষণার দলিল এর মাধ্যমে রেজিষ্ট্রি করে নেন।
পরে বাদির মনে উক্ত নিলাম এবং পর্চার ব্যাপারে সন্দেহ হলে তিনি জেলা মহাফেজখানা এবং জেলা রেকর্ড রুমে তল্লাশী করিয়া উহা ভুয়া এবং জাল বলে জানতে পারেন। এমতাবস্থায় স্থানীয় বৈঠকে সমাধান না হওয়ায় এবং বাদিকে প্রাণনাশের জন্য হামলা করায় বাদি বশির হোসেন বিগত ০৪-১১-২০২১ ইং তারিখে বরিশাল বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে তাহাদের এহেন জাল/জালিয়াতির বিরুদ্ধে প্রতিকার চেয়ে নালিশী মামলা দায়ের করেন। বশির হোসেন তার পৈত্রিক ওয়ারিশ থেকে পাওয়া ১৩৬ শতাংশ জমি ভোগ দখল করে আসছেন। কিন্তু হারুন গং ওই জমি আত্মসাৎ করতে ২০২১ সালে একটি জাল নিলাম ডিক্রী সৃষ্টি করেন। ২০২১ সালে ওই জাল ডিক্রী উপস্থাপন করে জমি দখলে নেয়ার চেষ্টা করেন। এতে বাদী বাধা দেন। এছাড়াও জাল পর্চা এবং দলিল দিয়ে ওই জমির রেকর্ড সংশোধন করার চেষ্টা করে ভূমি অফিস থেকে ব্যর্থ হয়। এ ঘটনায় ২০২১ সালের ৪ নভেম্বর হালিমা বেগমসহ ০৬ জনের বিরুদ্ধে আদালতে নালিশি মামলা দায়ের করেন । আদালত মামলাটির তদন্ত প্রতিবেদন প্রেরণ করার জন্য পুলিশ বুরো অফ ইনভেস্টিগেশন ( পিবিআই) কে নির্দেশ দেন।
জানা গেছে, গত বছর ২৫ শে জুলাই এস আই মো. নাঈমুর রহমান আদালতে তার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। তদন্ত প্রতিবেদনে তিনি আসামিদের জাল জালিয়াতির প্রমাণ পান। ওই দিন আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে হালিমাসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে সমন জারি করেন। এর মধ্যে ১ নং আসামি হালিমা মৃত্যুবরন করলে বাকি আসামিরা সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক জহির উদ্দিন এর আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করেন। আদালত তাদের মায়ের মৃত্যুতে জামিন মঞ্জুর করেন। এরপর দীর্ঘ এক বছর ১০ মাসের মাথায় এসে চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট মহিবুল হাসান এর আদালত গতকাল এ রায় ঘোষণা করেন। এ ব্যাপারে মামলার বাদি মো. বশির হোসেন বলেন আসামিদের সাজা না হওয়ায় এ রায়ে আমি মর্মাহত হয়েছি। আমি প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছি জালিয়াতির সাথে হালিমার ৫ সন্তানও জড়িত। মূলত হালিমার ৫ ছেলে হারুন গংরা তার মা হালিমার নামে এই নিলাম,পর্চা তৈরী করেছেন এবং তা বিভিন্ন দফতরে ব্যবহার করেছেন।আমি এ রায়ের বিরুদ্ধে জেলা ও দায়রা জজ বরিশাল বরাবর আপিল করব।
Shohidul Islam
SOMAJER ALO24